কালভার্ট নির্মাণ না করেই অর্ধকোটি টাকা তুলে নিলেন ঠিকাদার
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে কাজ না করেই ঠিকাদার কালভার্ট নির্মাণে বরাদ্দের অর্ধকোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সহায়তায় তাকে এ অর্থ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কাজ শেষ হওয়ার মেয়াদ পেরিয়ে এক বছরেও সেখানে কাজ শুরু হয়নি। এ নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জানা যায়, শাহরাস্তি উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ রাস্তার ১৫ মিটার পর্যন্ত কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সূচিপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের রাগৈ গ্রামে তপাদার বাড়ি খালপাড়া এলাকায় ১২ মিটার দৈঘ্যের কালভার্ট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৮ লাখ ৭৪ হাজার ১৭১ টাকা। এটি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ পান ঠিকাদার তাজুল ইসলাম সুমন। নির্মাণ কাজের জন্য ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে না পারলেও ২০২৫ সালের মে মাসে ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন তিনি।
আরও পড়ুন
সেতু-ইমিগ্রেশনে আটকা সোনাহাট স্থলবন্দরের অগ্রযাত্রা
টাঙ্গাইলে সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে লাখো মানুষ
উপজেলার উন্নয়ন কাজের অগ্রগতির চিঠি থেকে এ অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে জানা যায়। গত ২৯ মে হওয়া ওই চিঠিতে তৎকালীন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সবুজের স্বাক্ষর ও সিল রয়েছে। এই দুই কর্মকর্তা বদলি হয়ে এখন অন্য জেলায় কর্মরত।
কাজ না করে অর্ধকোটি টাকা উত্তোলন করে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বর্তমান ইউএনও নাজিয়া হোসেন। আগের ইউএনও ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সহযোগিতায় ঠিকাদার এ অর্থ উত্তোলন করেছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে সরেজমিন রাগৈ কালভার্ট নির্মাণ এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে হলে ওই এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ বলেন, ঠিকাদার কাজ করেনি। কাজ না করে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে বিষয়টি জানাজানি হলে কিছু পাথর রেখে গেছে।
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, গত বছর কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরুর আগেই ঠিকাদার চলে গেছে। জানতে পেরেছি তিনি টাকা তুলে নিয়েছেন। তবে এখান কালভার্ট নির্মাণ খুবই জরুরি। এটি নির্মাণ হলে কৃষকসহ হাজার হাজার মানুষের উপকার হবে।
খালের দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দা সালেহা বেগম ও মরিয়মেন্নেছা বলেন, কালভার্ট নির্মাণ করা খুবই জরুরি। উপজেলা সদরসহ নানা কাজে আমাদের অনেক দূর ঘুরে চলাচল করতে হয়। কালভার্ট নির্মাণ হলে যাতায়াত সহজ হবে।
আরও পড়ুন
২৩ বছরেও হলো না ফুলদী নদীর ওপর সেতু
পিকআপের ধাক্কায় ভেঙে গেলো সেতুর রেলিং
এই বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় ঠিকাদার তাজুল ইসলাম সুমনের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, কাজ পাওয়ার সময় পানির কারণে নির্মাণ শুরু করতে পারেননি। কাজ না করে ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আপনি পিআইওর সঙ্গে কথা বলেন।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আশিকুর রহমানকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের কাজ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর শেষেও না হওয়া নিয়ে বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও নাজিয়া হোসেন বলেন, রাগৈ গ্রামে কালভার্টের কাজ না করেই অর্থ লোপাট হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ও ওই স্থানটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কালভার্ট নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, কাজ না করেই প্রকল্পের বিল উত্তোলন হয়েছে তদন্তে প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব কালভার্ট এখনো নির্মাণ হয়নি সেসব কাজ বাস্তবায়ন জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএন/জিকেএস