ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

স্কুলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

কুমিল্লায় সেই শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনায় যাননি ইউএনওসহ অতিথিরা

জেলা প্রতিনিধি | কুমিল্লা | প্রকাশিত: ০৭:৫৬ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে স্কুলের টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. কামরুজ্জামানের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি আমন্ত্রিত অতিথিরা।

অনুষ্ঠানে যোগদান না করে দুর্নীতির বিপক্ষে মৌন প্রতিবাদ করায় অতিথি ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অভিযুক্ত কামরুজ্জামান উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি উপজেলা প্রধান শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রমতে, ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর মো. কামরুজ্জামান তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি বিভিন্নভাবে আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে স্কুল পরিচালনা কমিটির অভ্যন্তরীণ এক নিরীক্ষায় ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৬ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়। পরে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের মধ্যস্থতায় চার কিস্তিতে বিদ্যালয়কে ৪ লাখ টাকা পরিশোধ শর্তে রফাদফা হয়। এরপর কামরুজ্জামান বিদ্যালয় তহবিলে দুই কিস্তি পরিষদের পর ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে তিনি আর টাকা জমা দেননি।

এদিকে বর্তমান স্কুল পরিচালনা কমিটি ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা করে ১৪ লাখ ৬ হাজার ৭৮১ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়। এরপর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহআলম মজুমদার গত ৩০ সেপ্টেম্বর লিখিতভাবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামানকে নিরীক্ষা কপিসহ নোটিশ পাঠান। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিরুদ্ধে কেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না আগামী তিনদিনের মধ্যে সভাপতি বরাবর লিখিতভাবে জানানোর অনুরোধ রইলো। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

নোটিশ প্রদানের ১৪ দিন অতিবাহিত হলেও তিনি এর কোনো জবাব দেননি। বরং তড়িঘড়ি করে নিজ উদ্যোগে নিজের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ওই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথিদের নাম সম্বলিত একটি ব্যানার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর স্থানীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

ভাইরাল হওয়া ব্যানারে ইউএনও, শিক্ষা অফিসার, জামায়াতের একাধিক নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ ছিল।

এ নিয়ে সোমবার (১৩ অক্টোবর) জাগো নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ও জামায়াত নেতাদের প্রতিবাদে তাদের নাম বাদ দিয়ে পুনরায় একটি ব্যানার করেন প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামন। সেই ব্যানারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জামাল হোসেনকে প্রধান অতিথি ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম মীর হোসেনকে বিশেষ অতিথি করা হয় এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহআলম মজুমদারকে ওই অনুষ্ঠানের সভাপতি রাখা হয়।

তবে ব্যানারে উল্লেখিত কোনো অতিথি এবং সভাপতি কেউ আসেননি বিদায় অনুষ্ঠানে। পরে তিনি স্কুল পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য মতিউর রহমান সুমন, শিক্ষক প্রতিনিধি আলমগীর আলম মাঝিসহ স্কুলের ছাত্র শিক্ষকদের উপস্থিতিতে তিনি বিদায় নেন।

আরও পড়ুন:
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের ২৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

স্থানীয় বাসিন্দা ডা. মফিজুর রহমান স্বপন, নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী, জালাল উদ্দিন শিকদার ও কামাল উদ্দিন ফরায়েজীসহ স্থানীয় আরও একাধিক ব্যক্তি বলেন, প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান একজন দুর্নীতিবাজ শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে পরপর দুইবার অডিটের মাধ্যমে প্রায় ২৪ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে স্কুল পরিচালনা কমিটি। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে জাতি এটা প্রত্যাশা করে না। দুর্নীতিবাজের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিসহ অতিথিরা না আসায় তাদের সাধুবাদ জানায়। আমরা চাই তদন্তপূর্বক ও অর্থলোপাটকারী কামরুজ্জামানে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে ভবিষ্যতের কোনো শিক্ষক স্কুল ফান্ডের টাকা আত্মসাতের সাহস না পায়।

এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম মজুমদার বলেন, প্রধান শিক্ষক নিজেই নিজের সংবর্ধনার আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানের বিষয়ে অফিসিয়ালি কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। তাছাড়া আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার। তাই প্রতিবাদ স্বরূপ সেখানে যাইনি।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মীর হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেহেতু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, সে কারণে অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি। তার বিরুদ্ধের অভিযোগ দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি করে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জাহিদ পাটোয়ারী/এনএইচআর/জেআইএম