নৌপথের নতুন দিগন্ত আরিচা-খয়েরচর ঘাট প্রকল্প
আরিচা-খয়েরচর ঘাট প্রকল্প বাস্তবায়নের আশায় নতুন স্বপ্নে বিভোর পদ্মা-যমুনা নদীর দুই তীরের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুধু নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনই হবে না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করছেন তারা।
জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলার আরিচা ঘাট থেকে পাবনা জেলার খয়েরচর (খাসেরচর) পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে যাবে এবং সময়ও অনেক কম লাগবে। বর্তমানে ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে যমুনা সেতু হয়ে পাবনার দূরত্ব প্রায় ২৩৩ কিলোমিটার। কাজিরহাট-আরিচা নৌপথে এ দূরত্ব মাত্র ১৪৭ কিলোমিটার। এই নৌপথে ১৭ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট এবং কাজিরহাট থেকে আরিচা আসতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৩ মিনিট। সময় বেশি লাগায় অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও দ্রুতগতির স্পিডবোটে যাতায়াত করছেন।
বিআইডব্লিউটিসি অফিস সূত্রে জানা যায়, আরিচা থেকে কাজিরহাট ফেরিঘাটের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার, যেখানে পারাপারে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট। একটি ‘রো রো’ ফেরিতে প্রতি ঘণ্টায় জ্বালানি খরচ হয় ১২৯ লিটার এবং ছোট ফেরিতে ১২৮ লিটার। যদি আরিচা-খয়েরচর ঘাট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে দূরত্ব কমে আসবে ১০ কিলোমিটার এবং জ্বালানি খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে।

বিআইডব্লিউটিএর আরিচা অফিস সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ২০২৪ সালের ৯ জুন একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রস্তাবটিতে খয়েরচর (খাসেরচর) এলাকায় ৪টি ফেরিঘাট, ১টি লঞ্চঘাট ও ১টি স্পিডবোট ঘাট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর পাশাপাশি সেখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, টার্মিনালসহ একাধিক উন্নয়ন কাজের প্রস্তাব রয়েছে। এসব কাজের জন্য ১১০ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-
চাঁদপুর-ঢাকা নৌরুটে দ্রুতগামী নৌযান চালুর দাবি
সংযোগ হারিয়ে অচল সাতক্ষীরার নদীপথ
‘হাবুডুবু’ খাচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকার নৌরুট উন্নয়ন কাজ
পাবনা জেলার বাসিন্দা ব্যবসায়ী কাইয়ুম পোদ্দার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের যাতায়াতে অনেক সময় লাগে। আরিচা-কাজিরহাট ফেরি পার হতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। ব্যবসায়িক কাজে প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় যেতে হয়। ভীষণ কষ্ট হয়। যদি খয়েরচরে ঘাটটি হয়, তাহলে আমাদের কষ্ট অনেকটাই কমে যাবে আশা করি।’
সিরাজগঞ্জ জেলার ট্রাকচালক জামাল বলেন,‘আরিচা-কাজিরহাট ফেরি পার হতে অনেক সময় লাগে। যদি আরিচা-খয়েরচর ঘাট হয়, তাহলে আমাদের জন্য খুব ভালো হবে, তাড়াতাড়ি নদী পার হতে পারবো।’

মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার আরিচা এলাকার বাসিন্দা মামুন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক সময় আমাদের এই আরিচা ঘাট ছিল খুব জমজমাট। ঘাটকেন্দ্রিক ব্যবসা করে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। যদি আরিচা-খয়েরচর ঘাটটি হয়, তাহলে ঘাটটি আবার সেই আগের রূপে ফিরে আসবে। এই ঘাট আমাদের স্বপ্ন।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মো. রিসাদ আহমেদ বলেন, ‘আরিচা-খয়েরচর প্রকল্পের প্রস্তাব ২০২৪ সালের ৯ জুন পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবে খয়েরচর (খাসেরচর) এলাকায় ৪টি ফেরিঘাট, ১টি লঞ্চঘাট ও ১টি স্পিডবোট ঘাট স্থাপনসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাবের মোট বাজেট ১১০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মানুষের যাতায়াত অনেক সহজ হবে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আব্দুল সালাম বলেন, আরিচা-খয়েরচর ঘাটটি হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে, সময় অর্ধেকে নেমে আসবে এবং তেল খরচও কমবে। ওই ঘাট দিয়ে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১৬টি জেলার মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারবে। পাশাপাশি যমুনা সেতু ও রেল সেতুর ওপর চাপও অনেকটা কমে যাবে।
এফএ/জেআইএম