ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

লালমনিরহাটে নুয়ে পড়েছে হাজার হেক্টর জমির ধান

জেলা প্রতিনিধি | লালমনিরহাট | প্রকাশিত: ০৪:৫১ পিএম, ০২ নভেম্বর ২০২৫

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা চার দিনের হালকা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর জমির পাকা ও আধাপাকা আমন ধান নুয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেতের ধান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, কিছু ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। ফসল ঘরে তোলার ঠিক আগমুহূর্তে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাথায় হাত কৃষকদের।

জানা গেছে, তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদী বেষ্টিত লালমনিরহাটের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। চলতি বছর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় মোট ৮৬ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হলেও পুরোদমে ফসল মাড়াই শুরু হতে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন বাকি। ঠিক এমন সময়েই হানা দিয়েছে বৈরী আবহাওয়া।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসে অনেক ক্ষেতের উঠতি আমন ধান নুয়ে পড়ে পানিতে ডুবে আছে। কৃষকরা বলছেন, এই ধান আর ঘরে তোলার মতো অবস্থায় নেই। নুয়ে পড়া পাকা ধান কোনোমতে কেটে নিলেও আধাপাকা ধানের পুরোটাই নষ্ট হওয়ার পথে। শুধু ধান নয়, গবাদি পশুর প্রধান খাদ্য ধানের খড়ও পচে যাওয়ার আশঙ্কা তাদের। অনেক কৃষককে দেখা গেছে নুয়ে পড়া ধানগাছগুলো আঁটি বেঁধে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে। কেউ কেউ আবার ক্ষেত থেকে পানি সেচে বের করে দিচ্ছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে তাদের।

সিন্দুর্না ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক এরশাদ আলী বলেন, গতবারের বন্যায় আমনের যে ক্ষতি হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হলো এই বাতাসে। বন্যার পানি থেকে বেঁচে যাওয়া যেটুকু আশা ছিল, তাও নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকের বিপদ চারদিকে। ধান তো ঘরে উঠবেই না, এবার বুঝি না খেয়েই মরতে হবে।

মহিষখোচার কৃষক সহির উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, আমার ক্ষেতের একটা ধানের গাছও দাঁড়িয়ে নেই। সব মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আর ১০ থেকে ১৫ দিন গেলেই এই ধান ঘরে তুলতে পারতাম। এখন তো অর্ধেকেই পচে নষ্ট হবে। যে ধান পানিতে ডুবে আছে, তার খড়ও গরুর জন্য পাওয়া যাবে না। আলুর মতো আমনেও এবার চরম লোকসান গুনতে হবে। ঋণ পরিশোধ ও উৎপাদন খরচের চিন্তায় কৃষকরা এখন দিশেহারা। পরিবারের খাবার জোগান নিয়েই তারা গভীর দুশ্চিন্তায়।

এমন দুর্যোগের মুহূর্তে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের পাশে না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেক কৃষক। তাদের অভিযোগ, মাঠকর্মীরা সরেজমিনে না এসে ঘরে বসেই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছেন, যা দীর্ঘদিনের সমস্যা।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাইখুল আরেফিন জানান, চলতি বছর জেলায় ৮৬ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় নুয়ে পড়া আমন খেতের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। আমরা কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, যেসব ধান নুয়ে পড়েছে, সেগুলো গোছা করে বেঁধে দিলে ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব। আমরা কৃষকদের সেই পরামর্শই দিচ্ছি।

মহসীন ইসলাম শাওন/এনএইচআর/এমএস