ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বরিশাল-১

বিএনপির দখলে নির্বাচনি মাঠ, থেমে নেই জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন

শাওন খান | বরিশাল | প্রকাশিত: ০৯:২৪ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী ‍উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-১ আসন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে পুরোপুরি জমে উঠেছে এ আসনের নির্বাচনি মাঠ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতে এ আসনের নির্বাচনি মাঠ অনেকটাই বিএনপির দখলে। তবে থেমে নেই ইসলামি দলগুলোও। মাঠে রয়েছেন তারাও।

নানান জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বরিশাল-১ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দীন স্বপনের নাম ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন তিনি। গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় তার সমর্থকরা নিয়মিত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনসমর্থন আদায়ে কাজ করছেন।

স্বপনের অনুসারীদের দাবি, ত্যাগী নেতা হিসেবেই এবারও তাকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দীন স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘বরিশাল-১-এর সম্মানিত ভোটাররাই দুই দুইবার আমাকে এমপি নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছেন। চতুর্থবারের মতো বিএনপি আমার হাতে ধানের শীষ তুলে দিয়েছে। প্রতিবারই আওয়ামী লীগই ছিল আমাদের মুখোমুখি। নগণ্য ভোট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন হাতপাখা প্রার্থী। আশা করি, এবারও জনগণ নিরাশ করবে না। জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’

এ আসনে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরাও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বিরামহীনভাবে। তারা বলছেন, মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। তাই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তারাও।

জামায়াতে ইসলাম থেকে মাওলানা কামরুল ইসলাম খান এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মুহাম্মদ রাসেল সরদার মেহেদী এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। ছয় মাস আগেই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তারা। তবে এ আসনে এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি এনসিপি।

জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা বলছেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ডাকসু, জাকসু, রাকসু ও চাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির প্রার্থীদের অভূতপূর্ব বিজয়কে নির্বাচনি মাঠে কাজে লাগাতে চাইছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

নির্বাচনের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামের প্রার্থী মাওলানা কামরুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বাধীনতার এত বছর পরেও দেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। সমাজের গরিব, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষ একশ্রেণির শাসকের শোষণের শিকার হয়েছে। আমরা শাসক নয়, সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই।’

আরও পড়ুন:
জামায়াতের ‘দুর্গে’ জয় পেতে চায় বিএনপি

দলীয় মনোনয়ন ইস্যুতে টালমাটাল বিএনপি, নির্ভার জামায়াত
বিএনপিতে দোলাচল, এনসিপি থেকে আলোচনায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
রিয়াজুল হান্নান-সালাউদ্দিন আইয়ুবীর মধ্যে লড়াইয়ের আভাস
আসন ফাঁকা রাখায় দুশ্চিন্তায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা

তিনি বলেন, ‘মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অপশাসন দেখেছে। তারা পরিবর্তন চায়। এ কারণেই বরিশাল-১ আসনের মানুষ জামায়াতে ইসলামকে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুহাম্মদ রাসেল সরদার মেহেদী জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। সবমহলে ভালো একটা ফিডব্যাক পাচ্ছি। ইসলামি দলগুলো এখন পর্যন্ত এক প্ল্যাটফর্মে আছে। যদি শেষ পর্যন্ত সবাই এক প্ল্যাটফর্মে থাকতে পারি, তাহলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হতে যাওয়ায় ভোটারদের মধ্যেও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, যোগ্য প্রার্থীকেই তারা বেছে নেবেন।

গৌরনদী উপজেলা সদরের বাসিন্দা খোকন আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ১৫ বছরের নির্বাচনের হিসেব আর এবারের নির্বাচনের হিসেব পুরোপুরি আলাদা। এবার ভোট সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা দেখে সবাই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছে। গত ১৫ বছর কেউ কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি। যারা গেছে তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট না দিয়েই ফিরে এসেছে। এ অবস্থায় সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ভোটের উৎসব হবে।’

আগৈলঝাড়া উপজেলার রিপন ফকির বলেন, ‘গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় ইসলামি দলগুলো ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বিএনপির সামনে তারা কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারবে সেটাই দেখার বিষয়। তবে এবার যারাই জয়ী হতে চান, তাদের সাধারণ মানুষের কাছে যেতে হবে। ভোট পেতে হলে ভোটারদের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।’

বরিশাল-১ আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৪ হাজার ৩০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬৩ হাজার ৭৫৬ জন। নারী ভোটার এক লাখ ৫০ হাজার ৫৪৮ জন।

অতীতে নির্বাচিত যারা

বরিশাল-১ আসনে মোট সাতবার জিতেছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে তিনবার বিএনপি ও একবার জাতীয় পার্টির হাতে যায় এই আসন। ১৯৭৩ সালে এই আসন থেকে প্রথম নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ। এরপর ১৯৭৯ সালে মোশাররফ হোসেন শাহজাহান (বিএনপি), ১৯৮৬ সালে সুনিল কুমার গুপ্ত (জাতীয় পার্টি), ১৯৯১ সালে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ (আওয়ামী লীগ), ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জহির উদ্দিন স্বপন (বিএনপি), ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ (আওয়ামী লীগ) ও ২০০১ সালে জহির উদ্দিন স্বপন (বিএনপি) নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সাল থেকে টানা চারবার আওয়ামী লীগের দখলে থাকে এই আসন।

এসআর/এমএমএআর/জেআইএম