ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কক্সবাজার সৈকত বেলাভূমিতে ৪৫ ফুটের প্লাস্টিক দানব

জেলা প্রতিনিধি | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ১০:২১ এএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বেলাভূমিতে সমুদ্র থেকে উঠে এসেছে এক বিশাল ‘প্লাস্টিক দানব’। এ দানব যেন পৃথিবীকে সাবাড় করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। রাত কিংবা দিনে হঠাৎ দানবটি দেখলে ভয়ে আঁতকে উঠবে এ প্রজন্মের শিশু-কিশোররা। প্রাগৈতিহাসিক কালকে কল্পনার পর্দায় আনবে বয়োবৃদ্ধরাও।

দেখতে সত্যিকারের দানব মনে হলেও এটি আসলে একটি ভাস্কর্য, যা তৈরি করা হয়েছে কক্সবাজার উপকূল থেকে সংগ্রহ করা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে। মূল উদ্দেশ্য প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে সবাইকে সচেতন করা। সৈকতে আসা পর্যটক-দর্শনার্থীদের সতর্ক করতেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ প্রদর্শনী বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ প্লাস্টিক দানবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান। এসময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম, পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, অসচেতনতায় আমাদেরই ফেলা প্লাস্টিক বর্জ্য উপকূলে ভয়াবহতা দুর্যোগ সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতি সামুদ্রিক প্রাণীকুল ও জনজীবনে দুর্ভোগ বয়ে আনছে। সেটি ফুটিয়ে তুলতেই প্রায় ৬ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এ প্রতীকী ভাস্কর্য। বিশাল এ প্লাস্টিক দানবের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। বার্তাটি এমন- পৃথিবী আর নিতে পারছে না বর্জ্যের চাপ; এক বুক প্লাস্টিক নিয়ে প্রকৃতি মুমূর্ষু অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। এ যন্ত্রণা নিয়েই সমুদ্র থেকে উঠে এসে প্লাস্টিক দানবটি যেন আঘাত করছে মানুষের বিবেকের ওপর।

বিদ্যানন্দের প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধ কর্মসূচির সমন্বয়ক মুহাম্মদ মোবারক বলেন, ২০২২ সালে সর্বপ্রথম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিক দানব নির্মাণ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এবার সেই দানব আরও ভয়ংকর রূপে ফিরে এসেছে। সঙ্গে নিয়ে এসেছে আরও দুইটি দানব। তার মানে সমস্যা কমেনি বরং আরও বেড়েছে। সমুদ্র থেকে উঠে আসা এই দানব মানবজাতিকে ধীরে ধিরে গ্রাস করছে। পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে। মানুষ যদি সচেতন হয়ে প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে দেয় ও রিসাইকেল করে, তাহলেই এই দানব থেকে মুক্তি মিলবে।

কক্সবাজার সৈকত বেলাভূমিতে ৪৫ ফুটের প্লাস্টিক দানব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের পাঁচ শিল্পী অন্তু, আবীর, উচ্ছ্বাস, নির্ঝর ও রিয়াজের ১৫ দিনের শ্রমে ভাস্কর্যটি পূর্ণতা পায়। তাদের সহযোগিতা করেছেন আরও ৮ জন সহকারী। প্লাস্টিক বর্জ্যের পাশাপাশি বাঁশ, কাঠ, পেরেক, আঠাসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত সমুদ্রে ফেলা প্লাস্টিকগুলো দানব হয়ে ফিরে পৃথিবীকে হুমকির মুখে ফেলছে। মানুষসহ সামুদ্রিক সব প্রজাতিই প্লাস্টিক দূষণের শিকার।

ভাস্কর শিল্পী আবীর বলেন, বেলাভূমিতে এ ধরনের দানব ভাস্কর্য নির্মাণে প্রথমবার যুক্ত হলাম। দানবটির ভয়ংকর রূপ দেখে মানুষ প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আরও সচেতন হবে এবং দায়িত্বশীলভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করবে আশা করি। ভাস্কর্যটির উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট এবং নির্মাণে ব্যবহার হয়েছে প্রায় ৬ মেট্রিক টন প্লাস্টিক।

বিচকর্মী মাহবুব বলেন, বছরের প্রায় প্রতিদিন হাজারো মানুষ রিফ্রেশমেন্টের জন্য সৈকতে আসেন। অনেকেই পানীয়ের বোতল, পলিথিন বা খাবারের প্যাকেট নিয়ে এসে তা খালি হলেই বেলাভূমিতে ফেলে যান। কারণে-অকারণে তা সমুদ্রে গিয়ে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করছে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতেই ভাস্কর্য প্রদর্শনীর এ আয়োজন।

ফেনী থেকে আসা পর্যটক ইমতিয়াজ নুর বলেন, প্লাস্টিক পণ্য সবকিছু সহজ করে দিলেও এটা আসলেই দানবের মতোই প্রভাব ফেলছে। যত্রতত্র ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক শেষ পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপ নিয়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার।

গাজীপুর থেকে আসা পর্যটক আবুল কাশেম বলেন, বেলাভূমিতে বিদ্যমান দানবটি পৃথিবীকে যেন গ্রাস করে ফেলতে চাইছে, এটাই প্রতীক। উদাসীনতার কারণে সৈকত নোংরা হচ্ছে। অকারণে প্লাস্টিক ব্যবহার এবং উদাসীনভাবে ফেলে দেওয়া পৃথিবীকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো ও রিসাইকেল নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু এই প্রদর্শনী বোঝাচ্ছে, প্লাস্টিক সঠিকভাবে কাজে লাগালে পরিবেশ রক্ষা সম্ভব।

জেলা প্রশাসনের এডিএম মো. শাহিদুল আলম জানান, প্লাস্টিক দানবের পাশাপাশি বালিয়াড়িতে চিত্রকর্মও প্রদর্শিত হচ্ছে। সুগন্ধা পয়েন্টে আগামী তিন মাস এ প্রদর্শনী চলবে। পর্যটন উপকূলকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, সরকারের পলিসির সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে ৫০০ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করেছি। কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন উপকূল দেশের সবচেয়ে সংকটাপন্ন এলাকা। প্লাস্টিক দূষণ রোধে ২০২২ সাল থেকে বিদ্যানন্দ প্লাস্টিক সংগ্রহ করে রিসাইকেল করেছে। গত চার মাসে আরও ৮০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক সংগ্রহ করেছে। প্লাস্টিক বর্জ্য কীভাবে রিসাইকেলের মাধ্যমে সম্পদে রূপান্তর করা যায়, মানুষ তা জানছে। পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সচেতন করতেই তিন মাসব্যাপী ভাস্কর্য, চিত্রকর্ম এবং সচেতনতামূলক গান পরিবেশনা চলবে।

জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান বলেন, সৈকতকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে বাঁচাতে বিদ্যানন্দের উদ্যোগ অত্যন্ত কার্যকর ও প্রশংসনীয়। এটি পর্যটকদের মাঝে প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে বড় ধরনের সচেতনতা তৈরি করবে। এমন টেকসই মহৎ উদ্যোগের সঙ্গে জেলা প্রশাসন সবসময়ই আছে ও থাকবে। আশা করছি এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষ প্লাস্টিক ব্যবহারে আরও সতর্ক হবে।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমএস