ঝিনাইদহবাসীর জাতীয় পতাকা হাতে বিজয়োল্লাসের দিন আজ
আজ ৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ এ আজকের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয় ঝিনাইদহ জনপদ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যশোর ও ঝিনাইদহ পাক বাহিনীর কাছে হয়ে ওঠে এক আতঙ্কের জনপদ। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলা বাহিনীর তীব্র আক্রমণে তখন দিশাহারা পাক বাহিনী।
১৯৭১ এর ৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের পরাজিত করে ঝিনাইদহকে স্বাধীন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেদিন ঝিনাইদহের আকাশে প্রথমবারের মতো ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা।
১৯৭১ সালে ঝিনাইদহে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনী প্রথম সম্মুখযুদ্ধ হয় ১ এপ্রিল। জেলার সদর উপজেলার বিষয়খালী বাজারে মুক্তিবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে পাক হানাদাররা। ওই যুদ্ধে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বীর মুক্তি সেনানীরা।
জানা গেছে, বিষয়খালীতে ১ এপ্রিল ‘প্রথম সম্মুখ প্রতিরোধ যুদ্ধ’ হয়। ওই দিন পাকবাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভারী অস্ত্রসস্ত্রসহ কামানবাহী ট্যাংকের বহর নিয়ে ঝিনাইদহ দখলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনী ঝিনাইদহের বিষয়খালীতে অবস্থান নেয়। পাকবাহিনী বিষয়খালী বাজারের উপকণ্ঠে পৌঁছানো মাত্রই মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধারা বেগবতী নদীর ওপর বিষয়খালী সেতু গুঁড়িয়ে দেন। ফলে সেতুর অপর প্রান্তে আটকা পড়ে পাক সেনাদের বহর।
পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর দীর্ঘ ৮ ঘণ্টার সম্মুখ যুদ্ধ হয়। পরে মুক্তিবাহিনীর তুমুল আক্রমণে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকহানাদার বাহিনী। এছাড়া ১৯৭১ এর ৪ এপ্রিল শৈলকূপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ যুদ্ধ, একই দিন শৈলকূপা উপজেলার আলফাপুর যুদ্ধ, ২৬ নভেম্বরের কামান্না যুদ্ধ আজও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিতে ভাস্বর।
ঝিনাইদহের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টে (ইপিআর) ছিলাম। বাঙালি সেনাদের অস্ত্র সমর্পণের জন্য পাক আর্মি নির্দেশ দেয়। আমরা নির্দেশ অমান্য করে অস্ত্র নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যাই। পরে সিলেট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে যুদ্ধ করেছি। মৌলভীবাজারের ধলই সীমান্তে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের সতীর্থ হিসেবে যুদ্ধ করেছি। আমি সেদিন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে সারাদেশেই গেরিলা আক্রমণ বাড়ায় মুক্তিবাহিনী। গেরিলা আক্রমণে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী দিশাহারা হয়ে পড়ে।
জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম মশিউর রহমান বলেন, প্রথম স্বাধীন জেলা যশোর। ঝিনাইদহ তখন যশোরের একটি মহকুমা। বৃহত্তর যশোর জেলা একই দিনে স্বাধীন হয়। যশোর ক্যান্টনমেন্টে মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণে পাক বাহিনী বেহাল হয়ে পড়ে। ৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ঘর থেকে দলে দলে সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসে। তারা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিজয়োল্লাস করতে থাকে। আজও চোখের সামনে সেই দিনগুলো ভেসে বেড়ায়।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র, তরুণ, যুবকরা দেশ স্বাধীন করার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে লড়াই শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতে আমরা বিষয়খালী সেতু ভেঙে দিই। সেই সময়ের কথা এখনো চোখের সামনে ভাসে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রাম। মুক্তিযোদ্ধাদের মাথায় স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা তখন ছিল না।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধে জেলায় ২৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদের মধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন দুজন। তারা হলেন- বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ও বীর প্রতীক সিরাজুল ইসলাম।
এম শাহজাহান/এফএ
সর্বশেষ - দেশজুড়ে
- ১ অদক্ষতার কারণে কম বেতনের চাকরিতেও বেশি খরচে বিদেশে যায় শ্রমিকরা
- ২ যৌথবাহিনীর অভিযানে আটকের পর বহিষ্কৃত যুবদল নেতার মৃত্যু
- ৩ কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের দাপট, ১২ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা
- ৪ বাজারের অনিশ্চয়তায় থমকে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্থনীতি
- ৫ ফোন কিনতে বন্ধুদের নিয়ে বাড়িতে ডাকাতির নাটক, ৩ কিশোর গ্রেফতার