ক্লিনিক সিলগালা
সিজারে কেটে গেছে পেটের নাড়ি, গজ রেখে সেলাই দিলেন চিকিৎসক
নড়াইলের লোহাগড়ায় রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মোর্শেদা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার সিলগালাসহ সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে সিঅ্যান্ডবি চৌরাস্তায় অবস্থিত ক্লিনিকটিতে এ অভিযান চালায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল হাসনাত ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার সিলগালা ও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
এসময় ইপিআই প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কারী প্রসান্ত ঘোষ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, লোহাগড়া উপজেলা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বাপ্পিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল হাসনাত বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মোর্শেদা সার্জিক্যাল ক্লিনিক পরিদর্শন করি। এসময় বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ে। ক্লিনিকের লাইসেন্স নেই। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকে না। ডিপ্লোমাধারী সেবিকা না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে। এ কারণে ক্লিনিকের সব কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত চিকিৎসককে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব অপারেশন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাংখারচর গ্রামের শওকত মোল্যার স্ত্রী বাকপ্রতিবন্ধী সুমি খানম অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গত ২২ নভেম্বর ভোরে স্বজনরা তাকে লোহাগড়া উপজেলার সিঅ্যান্ডবি রাস্তায় অবস্থিত মোর্শেদা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে ভর্তি করেন। এসময় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক নেওয়াজ মোর্শেদ, আল খাদিজা সম্পা, ক্লিনিক মালিক জাকির হোসেন, ম্যানেজার সুমন, সেবিকা সাবিনা ওই নারীকে সিজারিয়ান অপারেশন করতে পরামর্শ দেন।
পরে ১৩ হাজার টাকা চুক্তিতে ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে তার সিজারিয়ান অপারেশন করেন চিকিৎসকরা। এসময় সুমির একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। অপারেশনের পর রোগীর পেট ফুলে যায়। এরপর থেকে তিনি অসুস্থ ছিলেন।
বিষয়টি সিজারিয়ান অপারেশন করা দুই চিকিৎসককে জানালে তারা জানান, রোগীর গ্যাসের ব্যথা রয়েছে। ২৭ নভেম্বর তার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় ৪ ডিসেম্বর একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো হয়। মেডিকেল রিপোর্ট দেখার পর ওই চিকিৎসক রোগীকে খুলনা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) সুমিকে খুলনা গাজী মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানান, সিজারিয়ান অপারেশনের সময় রোগীর পেটের নাড়ি কেটে যায়। ঘটনাটি জেনেও সঠিক চিকিৎসা না করে গজ দিয়ে নাড়ি চেপে সেলাই দেওয়া হয়। ফলে সেখানে পচন ধরে গেছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রোগী সুমির ফুপাতো ভাই কাজী ইয়াজুর রহমান বাবু সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
হাফিজুল নিলু/এসআর/জেআইএম