রাজবাড়ীতে ৪ লক্ষাধিক মেট্রিক টন হালি পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা
রাজবাড়ীতে শুরু হয়েছে হালি পেঁয়াজ রোপণ। এ বছর জেলায় প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। তবে, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ন্যায্য দামের নিশ্চয়তার জন্য চাষীরা ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ন্যূনতম ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছেন।
কৃষকরা জানান, এবার হালি পেঁয়াজ আবাদের জন্য বীজতলা তৈরি, হালি কেনা, সার-কীটনাশক দিয়ে জমি প্রস্তুত, সেচ, শ্রমিক মজুরিসহ প্রতি বিঘায় প্রায় ৪০-৫০ হাজার এবং জমি লিজ নিয়ে চাষ করলে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে চাষিদের। সে হিসেবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি না করে সারাবছরসহ মৌসুমে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম নূন্যতম দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করার দাবি চাষিদের। তাদের মতে, ন্যায্য দাম না পেলে ও ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলে পেঁয়াজ চাষে চাষিরা আগ্রহ হারাবে।
এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন হালি পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা জেলা কৃষি বিভাগের।
রাজবাড়ী মশলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ আবাদের সমৃদ্ধ একটি জেলা। এ জেলায় সারাদেশের প্রায় ১৫-১৬ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ও দেশের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থান রাজবাড়ীর। ফলে এ জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজ সারাদেশের চাহিদার বৃহৎ একটি অংশ পূরণ করে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ৩৬ হাজার ৯১৮ মতে মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩০ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিকটন। এরই মধ্যে জেলার কালুখালী, বালিয়াকান্দি, পাংশাসহ জেলার বিভিন্নস্থানের উঁচু মাঠে দলবদ্ধ হয়ে সারিবদ্ধভাবে হালি পেঁয়াজ লাগানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজবাড়ীর পেঁয়াজ চাষিরা।
এ বছর রাজবাড়ী সদরে ২ হাজার ৯০৬, পাংশায় ১০ হাজার ৪৭০, কালুখালীতে ৯ হাজার ৭৯০, বালিয়াকান্দিতে ১১ হাজার ৩২৯ ও গোয়ালন্দে ২ হাজার ৪২৬ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজের আবাদ হবে।
পেঁয়াজ চাষি আবুল কাসেম বলেন, আমরা পাঁচ হাজার টাকা চাই না, চাই দুই হাজার টাকা বাজার। বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা বন্ধ থাকার কারণে এখন একটু পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বাজার দুই হাজার টাকা থাকলে আমাদের জন্য যথেষ্ট। এর নিচে এলে কৃষক অচল হয়ে যাবে। এক বিঘা জমি নিজের হলে ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর লিজ নিয়ে চাষ করতে গেলে আরো ২৫-৩০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ লাগে। পেঁয়াজ চাষে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আগামীতে চাষে আগ্রহ হারাবো।
মোস্তফা নামে আরেক চাষি বলেন, আমাদের এলাকার মাঠজুড়ে হালি পেঁয়াজের চাষ হয়। উঁচু জমি হওয়ায় একটু আগে আবাদ শুরু করছি। বতর্মানে সার, বীজ, কীটনাশক, শ্রমিক মুজরিসহ সব কিছুর দাম বেশি। সে তুলনায় পণ্যের দাম পাওয়া যায় না। একেক সময় একেক রকম বাজার থাকে। গত বছর সিজনে যে দাম পেয়েছি তাতে কোনো রকম আসল টাকা উঠছে। তাই দেশের কৃষকদের বাঁচাতে হলে ভারতে পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে না। আমাদের দেশে অনেক পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে দেশের পেঁয়াজ দিয়েই দেশের চাহিদা মিটে যাবে ইনশাল্লাহ।
কৃষক শ্রী ভবতোষ বিশ্বাস বলেন, কৃষি কাজ করে আমাদের সংসার চলে। এখন হালি পেঁয়াজ লাগাচ্ছি, এই পেঁয়াজ আড়াই থেকে তিন মাস পর বাজারে উঠবে। এ পেঁয়াজের দাম যদি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার ওপর থাকে তাহলে আমরা কিছুটা লাভবান হব। আর কম হলে ক্ষতিগ্রস্ত হব।

চাষি রকিব মোল্লা বলেন, এ বছর আমি ১৫ বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজের আবাদ করছি। হালি পেঁয়াজ চাষের জন্য বীজ কেনা, বীজতলা তৈরি, খেত প্রস্তুত, রোপন ও পরিচর্যা থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত এক বিঘা জমিতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন ভাল হলে ৬০ থেকে ৭০ মন ফলন হবে। সে হিসেবে দাম নূন্যতম দুই হাজার টাকা থাকলে ভাল হবে। এখন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি যেভাবে রাখা হয়েছে এভাবে বন্ধ থাকলে আমরা লাভবান হব। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির কোনো দরকার নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বাজার স্থিতিশীল রাখা। বাজার স্থিতিশীল থাকলে সবার জন্যই ভাল।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজবাড়ীতে কৃষক ৩ ধরনের পেঁয়াজ উৎপাদন করে। প্রথমে মুড়িকাটা, পরে হালি ও দানা পেঁয়াজ উৎপাদন করে। এখানে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় হালি পেঁয়াজের। যেটা চারা রোপণের মাধ্যমে উৎপাদন হয়। এবার জেলায় ৩০ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে এই হালি পেঁয়াজের আবাদ হবে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে কৃষকরা হালি পেঁয়াজ আবাদ শুরু করে দিয়েছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি আবাদ শুরু হয়ে যাবে। বর্তমান পেঁয়াজের বাজার দর ভাল হওয়ায় আশা করছি আবাদ বেশি হবে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রুবেলুর রহমান/এমএন/এএসএম