ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বেনাপোল রেলপথে আমদানিতে নজিরবিহীন ধস

জামাল হোসেন | প্রকাশিত: ০২:২০ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্যের প্রধান দ্বার বেনাপোল রেলপথে আমদানিতে নেমেছে নজিরবিহীন ধস। বেনাপোল-পেট্রাপোল রেলস্টেশন দিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি। গত এক বছরে আসেনি কোনো খাদ্যপণ্য। ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা ও উৎকণ্ঠা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই পথ দিয়ে আমদানি হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন পণ্য। যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এছাড়া ২০২৫ সালে খাদ্যসহ কোনো পণ্য রেলপথে আমদানি হয়নি। ২০২৪ সালে কয়েকটি ট্রাক্টর এ পথে আমদানি হয়। আর ২০২৫ সালে এসেছে রেলের কিছু স্লিপার। বর্তমানে ক্লিংকার, স্টোনচিপ, কয়লা, খাদ্যশস্য, সিমেন্টের কাঁচামাল, তুলা, ট্রাক্টর এবং গার্মেন্ট উপকরণ রেলরুটে আসা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

তবে তার আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৮ হাজার ২০০ মেট্রিক টন পণ্য রেলপথে আমদানি হয়। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলপথে আমদানির পরিমাণ ছিল এক লাখ সাত হাজার ২০০ মেট্রিক টন।

বেনাপোল রেলপথে আমদানিতে নজিরবিহীন ধস

মূলত ভারত থেকে পণ্য আমদানির সময় প্রতিটি পণ্যের চালানের জন্য যে নির্দিষ্ট কয়েকটি বগি ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকে একেকটি রেক বলা হয়। কিন্তু ভারতীয় রেলওয়ের রেক সংকট, বেনাপোল স্টেশনের দুর্বল অবকাঠামো, আধুনিক যন্ত্রাংশের অভাব, শ্রমিক সংকট এবং কাস্টমস, রেল ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতাকে এ ধসের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, আগে প্রতি সপ্তাহে চার থেকে ছয়টি রেক পাওয়া যেত। এখন কোনো কোনো সপ্তাহে একটি রেকও আসে না। এমন অনিশ্চয়তার ওপর ব্যবসা চলে না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে সড়কপথে ঝুঁকছি।

আরও পড়ুন-

দু’মাস ধরে বেনাপোলে আটকা ১৫০ সুপারির ট্রাক, দিনে লোকসান ৩ লাখ

বছরের ব্যবধানে ভারতগামী যাত্রী কমেছে ৪ লাখ, ক্ষতি ৩২ কোটি

একবছরে ভারত ভ্রমণ সাড়ে ১৮ লাখ পাসপোর্টধারীর, রাজস্ব আয় ১৫০ কোটি

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় রেলের রেক সময়মতো না আসা আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ। দীর্ঘদিন ধরে পণ্য আটকে থাকে, লোকসান গুণতে হয়।

একই অভিযোগ আমদানিকারক মো. সাইফুল ইসলামের। তিনি বলেন, গত ১২ বছর ধরে রেলরুটে পণ্য আনছি। রেলরুটের সুবিধা হলো বাল্ক কার্গো সস্তায় আনা যায়, সেটা আমরা পাই না। বেনাপোল রেলস্টেশনের অবকাঠামো পুরোনো, ফর্কলিফট কম, শ্রমিক সংকট সবসময়ই থাকে। ফলে একটি রেক খালাস করতেই দিন শেষ হয়ে যায়। ভারতের পেট্রাপোলে যে রেক দুই ঘণ্টায় খালাস হয়, তা বেনাপোলে লাগে আট থেকে দশ ঘণ্টা। এতে ব্যবসার হিসাব মেলে না।

বেনাপোল রেলপথে আমদানিতে নজিরবিহীন ধস

বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রেলে পণ্য আমদানিতে স্বল্প সময়ে কম খরচে তারা লাভবান হতেন। সরকারও রাজস্ব পেতো অনেক। এই বন্দর দুটি দিয়ে রেলে আমদানি হতো খাদ্যপণ্য, কাঁচামাল, কটনসহ বিভিন্ন পণ্য ও ট্রাক্টর। ভিসা জটিলতাসহ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে গত ছয় মাস ধরে বেনাপোল-পেট্রাপোল রেলস্টেশন দিয়ে আসেনি কোনো খাদ্যপণ্য বা কাঁচামাল। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ীসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, রেলপথই হচ্ছে দেশের সবচেয়ে সস্তা পরিবহন ব্যবস্থা। এ রুটে আমদানি কমে গেলে পরিবহন খরচ বাড়বে, আর তা সরাসরি বাজারে পণ্যের দামের ওপর প্রভাব ফেলবে। এ অবস্থায় ভারতীয় রেলের সঙ্গে স্থায়ী রেক সরবরাহ চুক্তি, আধুনিক রেল টার্মিনাল নির্মাণ, দ্রুত খালাস ব্যবস্থা এবং কাস্টমস, রেল ও বন্দর তিন পক্ষের সমন্বয় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

বেনাপোল রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, গত ছয় মাসে ট্রেনে চাল, গম, ভুট্টা, মরিচ, পেঁয়াজ, আলুসহ কোনো খাদ্যপণ্য আসেনি। রেক সংকট আমাদের নিয়ন্ত্রণে না, ভারতীয় রেলওয়ে নিয়মিত রেক সরবরাহ না করায় আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। তবে আগামীতে সমস্যা কাটলে রেলে পণ্য আমদানি বৃদ্ধির আশা করছে রেল কর্তৃপক্ষ।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামিম হোসেন বলেন, রেলপথে আমদানি কমে যাওয়া আমাদের জন্যও উদ্বেগজনক। রেলপথ দ্রুত, নিরাপদ এবং লাভজনক হওয়ার কথা। কিন্তু রেলের সমস্যা, ইয়ার্ড সংকট ও ভারতীয় রেলওয়ের অনিয়মিত রেক সরবরাহের কারণে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। আমরা রেলবিভাগ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করছি যাতে খালাসের সময় কমে, কাগজপত্রের জটিলতা দূর হয়।

এফএ/জেআইএম