ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মঞ্চে মুক্তিযোদ্ধার ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান, হট্টগোল

জেলা প্রতিনিধি | ময়মনসিংহ | প্রকাশিত: ০৮:৫১ এএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এক মুক্তিযোদ্ধা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়ায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় অনুষ্ঠান স্থগিত করে উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

এরই মধ্যে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, বক্তব্যের শেষাংশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলছেন, ‘ইতিহাস মোছা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকেই আমরা মানি, জাতির পিতা হিসেবেই মানি। সেদিন রণযুদ্ধে জয় বাংলা ছাড়া অন্য কোনো স্লোগান কি ছিল? এই বাংলাদেশেই মুক্তিযোদ্ধা থাকবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় বাসিন্দা ও একাধিক মুক্তিযোদ্ধারা জানান, বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। একপর্যায়ে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বছির উদ্দিন। তিনি বক্তব্যের শেষাংশে শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ওই কথাগুলো বলেন। তার বক্তব্য শেষে ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুবসংগঠন জাতীয় যুবশক্তি ময়মনসিংহের সংগঠক আল মামুন, গণ অধিকার পরিষদের মুক্তাগাছা উপজেলার সভাপতি শাহীনুর আলম, জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক খাইরুল ইসলামসহ আরও অন্তত ১৫-২০ জন। তাদের একটি অংশ মঞ্চে উঠে ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগানে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এসময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষ্ণ চন্দ্র অনুষ্ঠান স্থগিত ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠান স্থগিতের পর মুক্তিযোদ্ধারা সভাস্থল ত্যাগ করলেও জুলাই যোদ্ধা ও আহতদের একটি অংশ বিচার দাবি করতে থাকেন।

ঘণ্টা খানেক পর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জুলাই যোদ্ধা, আহত ব্যক্তিবর্গ, মুক্তিযোদ্ধা ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জুলাই যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দের নেতৃত্বে আসন্ন নির্বাচনি পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতেই এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বছির উদ্দিন বলেন, আমি আমার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কথা বলেছি। যা সত্য তাই বলেছি। সত্য কখনোই চাপা থাকে না। আমি বক্তব্য দিয়ে নামার পর জুলাই যোদ্ধারা প্রতিবাদ করে বলতে থাকেন- বঙ্গবন্ধুর নাম বলা যাবে না। এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

এনসিপির যুবসংগঠন জাতীয় যুবশক্তি ময়মনসিংহের সংগঠক আল মামুন বলেন, এ পর্যন্ত আমরা কোনো মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে বেয়াদবি করিনি। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের জায়গায়। এখানে ফ্যাসিস্টদের বন্দনা পূর্বপরিকল্পিত। ওই মুক্তিযোদ্ধা শুরু থেকেই ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ এসব কথা বলে বক্তব্য দেন। এসময় আমিসহ কয়েকজন প্রতিবাদ করেছি। পরবর্তীতে এমন লোককে আর অনুষ্ঠানে ডাকা হবে না- এমন আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিয়ে কোনো বিতর্ক ছিল না। যখনই ওই মুক্তিযোদ্ধা ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন- তখনই উপস্থিত ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ জানায়। এতে হট্টগোল সৃষ্টি হয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়।

মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়েছিল। এ ঘটনায় কোনো পক্ষই লিখিত অভিযোগ দেয়নি। বর্তমানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতি কৃষ্ণ চন্দ্র বলেন, মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিশৃঙ্খলা এড়াতে অনুষ্ঠান দ্রুত সমাপ্ত করা হয়। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এটি নিষ্পত্তি করেছি।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এফএ/এএসএম