পিঠার ঘ্রাণে শীতের গল্প
বগুড়ার শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামের সামনে প্রতিদিন বিকেল গড়াতে মানুষের আনাগোনা বাড়ে। এ ভিড় ধোয়া ওঠা গরম পিঠার স্বাদ নিতে। মাছুমা আক্তারের দোকানের জ্বলন্ত চুলার পিঠা খেতে ছুটে আসেন মানুষ। জমে উঠছে পিঠার ঘ্রাণে শীতের গল্প।
গ্রাম বাংলার পারিবারিক উঠোনের পিঠার উৎসব যেন এখন শহরের ফুটপাতে ঠাঁই করে নিয়েছে। শুধু চাঁন্দু স্টেডিয়ামের সামনে নয়, শহরের সাতমাথা, বনানী, চেলোপাড়া কিংবা জজ কোর্ট চত্বর প্রতিটি মোড়ে বসেছে মৌসুমি পিঠার দোকান। তবে মাছুমার দোকানের চিতই, ঝাল পিঠা আর মিষ্টি কুসলি পিঠার খ্যাতি যেন একটু আলাদা। প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত এখানে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় মেতে পিঠা খাচ্ছেন, কেউ আবার বাড়ির ছোটদের জন্য গরম পিঠা পার্সেল করে নিচ্ছেন। খান্দার এলাকায় পিঠা খেতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম স্মৃতিকাতর হয়ে বলেন, নানি-দাদিদের হাতের সেই পিঠার স্বাদের সঙ্গে ফুটপাতের পিঠার তো আর তুলনা চলে না। আগে আমরা শীতজুড়ে অফুরন্ত পিঠা খেতাম। এখন সময়ের পরিক্রমায় ও নাগরিক ব্যস্ততায় বাড়িতে সেই আয়োজন আর সম্ভব হয় না। রাস্তার ধারের এ দোকানগুলোতে পিঠা খাওয়া অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতোই।
আরিফা খানম রিতু নামের এক পিঠা প্রেমী বলেন, শহুরে ব্যস্ত জীবনে এখন আর বাড়িতে পিঠা বানানোর ফুরসত মেলে না। আবার উপকরণের দামও অনেক। তাই রাস্তার ধারের এই পিঠা এখন ভরসা।

পিঠার চাহিদা বাড়লেও উপকরণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী মাছুমা আক্তার জানান, চালের গুঁড়া, চিনি, গুড় ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো আর লাভ থাকছে না। তবুও পেশার টানে আর ক্রেতাদের ভালোবাসায় এ আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দিনে গড়ে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকার বিক্রি হয়। লাভ যা-ই হোক, মানুষ যখন তৃপ্তি করে আমার হাতের পিঠা খায়, তখনই ভালো লাগে।
এ মৌসুমি পিঠার দোকানগুলোকে কেন্দ্র করে শহরে নতুন কাজের সুযোগও তৈরি হয়েছে। মাছুমার পিঠার দোকানে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ জনের। অনেক কারিগর এখন শহরজুড়ে পিঠা তৈরির কাজ করছেন। ছোট ছোট এ দোকানগুলো যেন বগুড়ার শীতকালীন ঐতিহ্যের এক একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, যেখানে পিঠার স্বাদের সঙ্গে ফিরে আসছে হারানো শৈশবের রঙিন স্মৃতি।
এলবি/আরএইচ/জেআইএম