রুট পরিবর্তন
বিএনপির মনোনয়ন দ্বন্দ্বে ঢাকা-ময়মনসিংহ ট্রেন চলাচল বন্ধ
মনোনয়ন কেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের জেরে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের তুলে ফেলা রেললাইন মেরামত করে সচল করা হয়েছে। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি ও পুনরায় নাশকতার আশঙ্কায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সরাসরি রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে এই পথের ট্রেনগুলো বিকল্প হিসেবে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেলপথ ব্যবহার করে যাতায়াত করছে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নাশকতার কবলে পড়া রেললাইন মেরামত এবং লাইনচ্যুত হওয়া ‘অগ্নিবীণা’ ট্রেনের বগি উদ্ধার করা হয়।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল্লাহ আল হারুন জানান, রেললাইন সচল হলেও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সরাসরি রুটে ট্রেন চালানো হচ্ছে না। ফলে যমুনা এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনগুলো ভৈরব হয়ে ঘুরপথে চলাচল করছে।
তিনি বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রেললাইন সচল করে উদ্ধারকারী ট্রেনের সাহায্যে এসে লাইনচ্যুত ট্রেনের বগি উদ্ধার করা হয়। কিন্তু আবারও যে-কোনো সময় রেললাইনে নাশকতা হতে পারে। এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে নিরাপত্তা বিবেচনায় ঢাকা- ময়মনসিংহ রেলপথ এখনো বন্ধ রয়েছে।

পুলিশ ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর দিকে সালটিয়া মাঠখোলা এলাকায় রাতের আঁধারে আনুমানিক ১৫ ফুট রেললাইনের লোহার দণ্ড দুপাশ থেকে নাট খুলে সরিয়ে ফেলা হয়। বিষয়টি রেলওয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের নজরে আসেনি।
পরে সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ভোরে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী আন্তঃনগর অগ্নিবীণা ট্রেনটি ঢাকায় যাচ্ছিল। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর দিকে সালটিয়া মাঠখোলা এলাকা পর্যন্ত আসতেই ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ সামনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে ভাগ্যক্রমে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ বন্ধ থাকায় ঢাকা-তারাকান্দি রুটের আন্তঃনগর অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, তারাকান্দি-ঢাকা রুটের আন্তঃনগর অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ বাজার-ঢাকা রুটের আন্তঃনগর ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ-ঢাকা রুটের আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। টিকিটের মূল্য ফেরত পেতে অনলাইনে লগইন করে রিফান্ড গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও রেললাইনে উপর্যুপরি নাশকতার ঘটনায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা শহরে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
এর আগে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ময়মনসিংহ- ১০ গফরগাঁও আসনে মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বাচ্চুর প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার খবর এলাকায় পৌঁছালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান ও তার ভাতিজা দলের সদস্য মুশফিকুর রহমানের অনুসারীরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসেন। বিকেলে পৌর শহরের প্রধান প্রধান কয়েকটি সড়ক টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দেওয়া হয়। বিকেল ৪টার দিকে শতাধিক নেতাকর্মী গফরগাঁও রেলস্টেশনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা স্টেশনমাস্টারের কক্ষে ঢুকে তাকে বের করে দিয়ে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেন।

এরপর রেললাইনের ওপর টায়ার ও গাছের টুকরা এনে আগুন ধরিয়ে দিয়ে অবরোধ করেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় জামালপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফাতেমানগর এলাকায়, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, আউলিয়া নগর, জামালপুর কমিউটার, মশাখালীতে, যমুনা কাওরাইদে, মহুয়া ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে, অগ্নিবীণা ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে ও জামালপুর এক্সপ্রেস ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে আটকে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
আন্দোলনে থাকা স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা রাত সাড়ে ১০টার দিকে রেলপথ থেকে সরে যায়। এরপর থেকে রেললাইন সচলের কাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে আবারও বিভিন্ন স্থানের রেললাইনে কলাগাছ ফেলে ট্রেন চলাচল বন্ধ করতে চেষ্টা চালানো হয়। এর ফলে লাইনটি সচল করতে দেরি হয়। রাত ১টা ২০ মিনিটে রেললাইন পুরোপুরি সচল হলে ৯ ঘণ্টা পর ঢাকা- ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
পরদিন রোববার ভোরে গফরগাঁওয়ে রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে আবারও আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ লোকজন। সকালে পুলিশ ও রেলওয়ে কর্মচারীদের বিষয়টি নজরে আসে। ট্রেনের নিরাপত্তায় সকাল সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা- ময়মনসিংহ রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বেলা ১১টার দিকে এই রুটে আবারও ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
তবে দুপুর দেড়টায় আবারও রেললাইন অবরোধ করলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রেললাইন অবরোধের তিন ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রেলওয়ের কর্মীরা রেলপথ সচল করলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে আবারও ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
কামরুজ্জামান মিন্টু/কেএইচকে