আক্কেলপুরে এলাহী কাণ্ড!
‘বাঙালির শীতকালীন উৎসব ও প্রীতিভোজ’ ব্যানারে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের রোয়ার গ্রামে মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হলো দেশ সেরা শীতকালীন উৎসব ও মহা প্রীতিভোজ। এই উৎসব ও প্রীতিভোজে যোগ দেন জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৩০ হাজারেরও অধিক মানুষ।
প্রীতিভোজটির আয়োজক আক্কেলপুর উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি সদস্য জিয়াউল হক জিয়া।
প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানে জয়পুরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, বিভিন্ন দফতরের সরকারি কর্মকর্তা, সকল দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও নিজ গ্রামবাসীসহ আশেপাশের গ্রামবাসীদের দাওয়াত দেয়া হয়।
বাবুর্চির দলনেতা বগুড়ার তোজাম্মেল হোসেন জানান, এতগুলো লোকের আপ্যায়নের জন্য ১০০ মণ গরুর মাংশ, ২০ মণ খাসির মাংশ, ৮০ মণ মাছসহ প্রায় দেড়শ’ মণ আলুসহ বিভিন্ন শাক-সবজি রান্না করেন ৯০ জন বাবুর্চি ও তাদের ১২০ জন সহযোগী। বিপুল পরিমাণ রান্নার কাজে ৬০০টি চুলায় জ্বালানি খড়ি ব্যবহার করেছে প্রায় হাজার মণ। আয়োজনের মধ্যে আরও রয়েছে ৪৫ মণ দই ও ৪০ মণ মিষ্টি।20170131215149.jpg)
এই বিশাল আয়োজনের প্যান্ডেল করা হয় ১১৫ একর জমিতে যেখানে ২ হাজার পিস বাঁশ, ৫০ মণ রশির প্রয়োজন হয়। এছাড়া জয়পুরহাট, বগুড়া ও ঢাকা থেকে ভাড়ায় নিয়ে আসা হয় মানুষকে খাওয়াতে বসার জন্য ১০ হাজার চেয়ার, ৫০ হাজার গজ কাপরের মাদুর, ৪০০টি হাত ধোয়ার বেসিনসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক পানি সরবরাহের গ্লাস ও জগ রাখা হয়।
অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে গত ৭ দিন ধরে ১ হাজার ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক পালাক্রমে কাজ করেছেন বলে জানান এ অনুষ্ঠান উদযাপনের আহ্বায়ক জিয়া।
এখানে খাবার পরিবেশন একই রকম হলেও দুই ধরনের প্যান্ডেল করা হয়। একটাতে মাটিতে বিছানো মাদুরে বসেন সাধারণ মানুষ ও চেয়ার-টেবিলে পরিবেশন করা হয় অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি)।
অন্যদিকে শীতকালীন উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল আবহমান বাংলার হরেক রকমের পিঠা-পুলির ৫টি স্টল। নিমন্ত্রিত অতিথিরা স্টলগুলোতে রাখা পিঠা-পুলিগুলোর স্বাদ দেন বিনামূল্যে।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউল হক গত ইউপি নির্বাচনে রুকিন্দীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। পরে তিনি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহসান কবির এপ্লব পরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
গ্রামবাসীরা জানায়, আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জিয়াউল হকের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা রয়েছে। তার জন্য এতো আয়োজন। তিনি রাজনৈতিক পরিবারই সন্তান। তার বাবাও ছিলেন আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম আলাউদ্দিন সরদার।
আক্কেলপুর উপজেলার আমট্টু গ্রামের শহীদ হোসেন ও জয়পুরহাট সদর উপজেলার আদর্শপাড়ার মুকুল হোসেন বলেন, এতো বড় খাওয়ার আয়োজন পুরো জেলায় আগে কখনো হয়নি।
আক্কেলপুর পাইলট স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র সোহানুর রহমান ও জয়পুরহাট পৌর এলাকার ফরহাদ হোসেন জানান, সবার মুখে মুখে অনুষ্ঠানের কথা শুনে দেখতে এসেছি। তবে এরকম অনুষ্ঠান দেখে খুব আশ্চর্য হয়েছি।
অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার সময় নাম প্রকাশে অনেকে জানান, এতো বড় অনুষ্ঠানের ব্যয়ের টাকায় ৪০ জন গরিব মানুষের কর্মসংস্থান করা যেত।
এই বিশাল জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। শেষ পর্যন্ত এতো বড় জনসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ৫০ জন পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ২০ জন পুলিশসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গোয়েন্দা পুলিশ মোতায়েন করা হয় বলে জানান আক্কেলপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম।
রাশেদুজ্জামান/এএম/আরআইপি