নাছিমার বসতঘর ভেঙে নিলো এনজিও!
মাত্র ১২ হাজার টাকা! এই টাকার জন্য আশ্রয়ের বসতঘর ভেঙে নিয়ে গেল এনজিও! বার বার কাকুতি-মিনতি করেও সামান্য দয়া পাননি স্বামী পরিত্যক্তা নাছিমা বেগম। এখন দশম শ্রেণি পড়ুয়া একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ছোট্ট খুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে এনজিও প্রতিনিধিরাও সাজাচ্ছেন ভিন্ন নাটক। দায়ভার চাপাচ্ছেন উল্টো ওই পরিবারের দিকেই। তবে প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
জানা যায়, দেড় বছর আগে স্বামী নিরুদ্দেশ হওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েন নাছিমা বেগম। একমাত্র মেয়েকে সম্বল ভেবে স্বামীর ভিটায় কোনরকম খেয়ে না খেয়ে জীবন চলতে থাকে তার। মেয়ের পড়ালেখা চালানোর জন্য গত ২ ফেব্রুয়ারি কালকিনি উপজেলার এনায়েতনগর শাখা থেকে `আশা` নামের একটি এনজিওর কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নেন তিনি। এরপর কয়েক সপ্তাহ কষ্ট করে ৩ হাজার টাকা পরিশোধও করেন।
তবে বৈশাখী ঝড়ের কারণে কয়েকদিন শ্রমিকের কাজ বন্ধ থাকায় কয়েকটি কিস্তি দিতে দেরি হয় নাছিমার। এতেই ক্ষেপে যান এনজিওর কর্মীরা। বাধ্য হয়ে নাছিমা এনজিও শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে কিছুদিন সময় চান। কিন্ত তাতেও মন গলেনি এনজিও কর্মীদের। শনিবার দুপুরে মাত্র ১২ হাজার টাকার জন্য সম্পূর্ণ ঘরটি অন্যের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। চোখের সামনে ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় মা-মেয়ের একমাত্র সম্বল আশ্রয়ের ছোট্ট ঘর। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে পরিবারটি। পরে বাধ্য হয়ে খুপড়ি ঘরে মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নিতে হয় তার।
মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে ফেলে নাছিমা ও তার দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে লিমা আক্তার। এতে স্থানীয়রা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তারা এনজিওর এরকম কর্মকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে টনক নড়ে স্থানীয় প্রতিনিধিদেরও। ছুটে যান ইউপি চেয়ারম্যান। তিনিও এই কর্মকাণ্ডের জন্য এনজিওটির বিচার দাবি করেন। তবে সমিতির শাখা ব্যবস্থাপক বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে উল্টো মহিলার উপরই দায়ভার চাপিয়ে দেন।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি দেখভালের জন্য পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। নাছিমার মতো আরো সহস্রাধিক মহিলা এই এনজিওর কার্যক্রম বন্ধের দাবি করেন। সেই সঙ্গে এই শাখার কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করেন তারা।
এ কে এম নাসিরুল হক/এমজেড/আরআই