মেয়ের সন্ধান চেয়ে কাঁদছেন মা
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গৃহবধূ ছাহেরা বেগমকে (৪০) পিটিয়ে আহত করার ঘটনার সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ।
তিনি উপজেলার নগর ভাতগ্রাম গ্রামের জলিল মোল্লার স্ত্রী। রোববার দুপুরে মির্জাপুর প্রেসক্লাবে এসে কান্নাজড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন তিনি।
ছাহেরা বেগম জানান, আনুমানিক ৫ বছর আগে উয়ার্শী ইউনিয়নের খৈলসিন্দুর গ্রামের রুহু মোল্লার ছেলে মিনহাজ মোল্লার সঙ্গে তার মেয়ে মদিনার বিয়ে হয়। এক বছর আগে মদিনা বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে। একই গ্রামের আরজ আলীর ছেলে আকবর মিয়া (৩৫) ফুসলিয়ে মদিনা বেগমকে উপজেলার দেওহাটা বন্ধু চোলা অফিসে চাকরি দেন। চাকরি থেকে তিনবার মদিনাকে ফেরত আনেন তার মা ছাহেরা বেগম। গত কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ পর সেখান থেকে মদিনা নিখোঁজ হন।
এ বিষয়ে মদিনার বাবা জলিল মোল্লা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জাপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল হোসেন মেয়ে উদ্ধারের কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকাও নেন।
ছাহেরা বেগম বলেন, কিন্তু টাকা নিয়েও আমার মেয়ের কোনো খোঁজ দিতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া মামলাও রেকর্ড করেনি। পরবর্তীতে পরিবারের পক্ষ থেকে আকবরকে সন্দেহমূলক আসামি করে মির্জাপুর থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগের পর তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জাপুর থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বিশ্বজিৎ আকবরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। বিশ্বজিৎ তাদের কাছ (মেয়ের বাবা) থেকে এ বিষয়ে কিছু টাকা নেন।
কিন্তু আকবরকে আটকের পর পুলিশ অজ্ঞাত কারণে তাকে ছেড়ে দেন। ছাড়া পেয়ে আকবর গ্রামে গিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাহেরা বেগমের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করে।
এর আগে হামলার ঘটনায় আকবরকে আসামি করে থানায় তৃতীয় দফায় লিখিত অভিযোগ দেন ছাহেরা বেগম। অভিযোগের সাড়ে তিন মাস পার হয়ে গেলেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণে মামলা রেকর্ড করেনি।
রোববার দুপুরে ছাহেরা বেগম ও তার বড় বোন সুফিয়া বেগম মির্জাপুর প্রেসক্লাবে এসে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, গরীবদের জন্য থানা পুলিশ নয়, যারা মোটা টাকা দিতে পারে তাদের জন্য থানা পুলিশ। গরীব হলেও ১০-১২ হাজার টাকা দিয়েছি পুলিশকে। তারপরও মেয়েকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তাছাড়া আমাকে মারপিট করলো তারও বিচার চেয়ে অভিযোগ দিলাম তবুও মামলা নিল না পুলিশ। ওরা আমার মেয়েকে জীবিত রেখেছে না মেরে ফেলেছে আমি জানি না।
মির্জাপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বাবুল হোসেনের সঙ্গে মুফোফোনে যোগাযোগ করা হলে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
তিনি বলেন, অপহরণের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছিলাম। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম বিষয়টি অপহরণ না প্রেমগঠিত বিষয়। এ বিষয়ে পরবর্তীতে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেনি।
মির্জাপুর থানা পুলিমের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিতের সঙ্গে মুফোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আকবরকে আটক করা হয়েছিল।
মামলা না নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনিও কোনো উত্তর দিতে পারেননি। পরে মদিনার মা ছাহেরা বেগমকে মারপিটের ঘটনার অভিযোগের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আকবর ছাহেরা বেগমকে মেরেই পালিয়ে রয়েছেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এস এম এরশাদ/এএম/জেআইএম