জয়পুরহাটে টিসিবির ১৬ ডিলারের মধ্যে পণ্য তুলেছে ৪ জন
বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে সরকার ন্যায্যমূল্যে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর মাধ্যমে খাদ্যপণ্য বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এমন ঘোষণার বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও পুরোদমে খাদ্যপণ্য বিক্রি শুরু হয়নি জয়পুরহাটে। জেলায় টিসিবি মনোনিত ১৬ জন ডিলারের মধ্যে মাত্র ৪ জন ডিলার পণ্য বিক্রি শুরু করলেও অন্যরা গুদাম থেকে পণ্যই উত্তোলন করেননি এখনও।
ফলে টিসিবির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্চেন সাধারণ মানুষ। এসব পণ্যের লাভ না থাকায় তারা পণ্য তুলতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এদিকে প্রশাসনের দাবি দ্রুতই শুরু হবে টিসিবি পণ্য বিক্রয়, পণ্য বিক্রি শুরু না করলে ডিলারদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে যথাযথ ব্যবস্থা।
সাতদিন আগেও যেখানে ছোলা বুট ৮০ টাকা, চিনি ৬০-৬২ টাকা ও সোয়াবিন তেল ৮২ টাকা লিটার বিক্রি হয়েছে।
রমজান শুরুর পর বাজারে ছোলা, চিনি ও তেলের দাম পাঁচ থেকে দশ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ছোলা বুট ৮৫ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, সয়াবিন তেল ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মসুর ডালের দাম বৃদ্ধি পায়নি।
অপরদিকে টিসিবির সরবরাহকৃত পণ্যের দাম হচ্ছে, চিনি ৫৫ টাকা, সোয়াবিন তেল ৮৫ টাকা লিটার, ছোলা বুট ৭০ টাকা ও মসুর ডাল ৮০ টাকা।
জয়পুরহাটে টিসিবির পণ্য যারা উত্তোলন করেছেন তারা হলেন, পাঁচবিবির মেসার্স লালজি প্রসাদ গোয়ালা, ক্ষেতলালের মেসার্স রফিকুল স্টোর, মেসার্স প্রার্থনা অ্যান্ড প্রত্যয় ট্রেডার্স, মেসার্স রনি এন্টারপ্রাইজ ও ডিলার টিকিয়ে রাখার জন্য নামমাত্র পণ্য উত্তোলন করেছেন মুক্তা এন্টারপ্রাইজ।
টিসিবি কর্তৃক ২টি ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবি ডিলার মেসার্স লালজি প্রসাদ গোয়ালা ও মেসার্স রনি এন্টারপ্রাইজের পণ্য জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির কথা থাকলেও শুধুমাত্র মেসার্স লালজি ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছে, তাও আবার শুধুমাত্র ডিসি চত্বর এলাকায়।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বুলুপাড়া গ্রামের আমেজউদ্দিন ও সাহেবপাড়া এলাকার মুক্তার হোসেন জানান, বাজারের পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত মূল্যে টিসিবির মাধ্যমে খাদ্য পণ্য সরবরাহ করছে তা সর্ম্পকে আমরা কিছুই জানি না এবং কোথায় পাওয়া যায় তাও জানি না।
জয়পুরহাট পৌর শহরের শান্তিনগর এলাকার মাসুম আহম্মেদ ও প্রফেসরপাড়ার জিল্লুর রহমান বলেন, সব ডিলাররা যদি পণ্যগুলো উত্তোলন করত তাহলে আমরা সাধারণ মানুষ খুব উপকৃত হতাম এবং সরকারের যে উদ্যোগ আমাদের জন্য তা সফল হত।
মেসার্স ছিদ্দিক ট্রেডার্সের স্বত্তাকারী ও টিসিবি ডিলার মনোয়ার হোসেন জানান, টিসিবি গুদাম থেকে সচল বিক্রি পণ্যের সঙ্গে যে পণ্যগুলো বিক্রি কম হয় তা আমাদেরকে জোর করে দেয়া হয় এতে করে পণ্যগুলো নিয়ে আমরা পরে বিপদে পড়ে যায়। এজন্য টিসিবির পণ্য আর উত্তোলন করি না। যেকোন মুহূর্তে টিসিবির ডিলারশিপ সমর্পণ করব।
মেসার্স প্রার্থনা অ্যান্ড প্রত্যয় ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী ও জয়পুরহাট টিসিবির ডিলার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, টিসিবির পণ্য তুলতে হয় রাজশাহী থেকে, আর জয়পুরহাট থেকে রাজশাহীর দূরত্ব প্রায় ১২০কিলোমিটার। এমন দূরত্বে মাল তুলতে গিয়ে পরিবহন খরচ গুণতে হয় বেশি। ফলে তেমন লাভ না হওয়ায় অনেক ডিলারই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না টিসিবির পণ্য তুলতে।
জয়পুরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্য পণ্য ক্রয় করতে পারে সে জন্য টিসিবির খাদ্যপণ্য বিক্রি করতে ডিলারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
এদিকে প্রশাসন ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা বললেও রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার কোনো নমুনা দেখা যায়নি। তবে জেলায় খাদ্য পণ্যের দাম আরো সহনীয় রাখতে দ্রুত টিসিবি ডিলারদের মাধ্যমে খাদ্য পণ্য বিক্রি শুরু করতে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে মনে করছেন সাধারণ ক্রেতারা।
রাশেদুজ্জামান/এফএ/এমএস