ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ফলন ভালো হলেও দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক

প্রকাশিত: ০৭:৪০ এএম, ২১ মে ২০১৫

`এক কুর (এক একর) জমির ধান কাটতে বারোডা (১২ টা) কামলা (মজুর) নাগে। এহেকটা কামলার দাম ৫০০ ট্যাহা (টাকা)। আর বাজারে ধানের দাম ৪০০ ট্যাহা মুণ (মণ)। এক মুন ধান বেঁইচ্চা একটা কামলার মায়নাও অইতাছে না। ইবা অইলে কিবা করে আবাদ-ফসল করমু। আংগর কৃষকগরে অহন মরণ দশা।’ কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর সদরের ভাতশালা এলাকার কৃষক মো. দুলাল মিয়া (৫২)।

শেরপুরে এবার বোরো ধানের ফলন ভাল হলেও বাজারে দাম না পেয়ে কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এক মণ ধান বিক্রি করে একজন ধানকাটা শ্রমিকের মজুরি হচ্ছে না। উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে ধানের দাম অনেক কম হওয়ায় বোরো আবাদের এই ভরা মৌসুমে কৃষক পরিবারের আনন্দের বদলে ভর করেছে দারুণ হতাশা।

কৃষকরা জানান, এক মণ ধান ফলাতে বীজ-সার, সেচ, কাটাই-মাড়াইসহ উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৮০০ টাকা। কিন্তু বাজারে ধান বিক্রি করতে গিয়ে তারা দাম দেখে হতাশ হয়ে পড়ছেন। নগদ টাকার জন্য কম দামেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তার ওপর নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি জনপদের বেশ কিছু জমিতে নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ এবং নকলা, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও সদর উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড় শিলাবৃষ্টিতে অনেক কৃষকের বোরো আবাদ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একর প্রতি তাদের উৎপাদন নেমে এসেছে ২০/২৫ মণ করে।

নালিতাবাড়ীর বারোমারী গ্রামের কৃষক মো. সুরজ্জামান বলেন. কি আর কমু, নেক ব্লাষ্ট আর শিলে যে ক্ষতি হয়েছে, আমারতো ধানকাটার কামলার ময়নাও ওঠবোনা। আমার মতো অনেক কৃষকেরই একই অবস্থা।

কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খাদ্যে উদ্বৃত্ত শেরপুর জেলার কৃষকরা গত আমনেও ধানের ভালো দাম পায়নি। আমদানি করা চালের কারণে ধানের বাজারে ধস নেমেছিলো। হাল না ছেড়ে কৃষকরা মনোযোগী হয়েছিলেন শীতকালীন সবজি চাষে। কিন্তু জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় টানা অবরোধ-হরতালের কারণে কৃষকের উৎপাদিত সবজিতেও ব্যাপক লোকসান গুণতে হয়। শীত শেষে বুক ভরা আশা নিয়ে বোরো আবাদে মাঠে নেমেছিলো কৃষকরা। কিন্তু তাদের ফলানো বোরো ধানেও এবার লোকসান গুণতে হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে বাজারে বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে জাত ও প্রকারভেদে মণ প্রতি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। মাঠ থেকে ধান কেটে আনার পর মাড়িয়ে সেই ধান সাড়ে ৩০০ থেকে ৪২০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রতিদিন একজন ধানকাটা শ্রমিকের মজুরি গুণতে হয় ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা। তার ওপর রয়েছে দুই বেলার খাবার।

এদিকে, সরকার ১ মে থেকে বোরো সংগ্রহ অভিযানের ঘোষণা দিলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। শেরপুরে এখনও বরাদ্দ পত্র আসেনি কিংবা সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রাই স্থির হয়নি। তাছাড়া চালকল মালিকদের সাথে খাদ্য বিভাগের চুক্তিও এখনো হয়নি।
    
শেরপুর খামারবাড়ীর হিসাব মতে, জেলায় এবার ৮৬ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ৮৯ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় জেলায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬২ মে. টন চাল উৎপন্ন হবে বলে শস্য উৎপাদন বিশষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুছ ছামাদ বলেন, এবার বোরোর ভালো ফলন হয়েছে। তবে বাজারে দাম কম থাকায় কৃষকরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন। তবে সরকার বোরো সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। আশা করছি বাজারে ধানের দাম বাড়বে।

এসএস/পিআর