গাইবান্ধায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত, ২ শিশুর মৃত্যু
গাইবান্ধার চার উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশু মারা গেছে। বন্যা কবলিত এলাকার পানিবন্দি মানুষ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশনসহ নানা সমস্যায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নে ১৯০টি গ্রামের ২ লাখ ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া ১৩ হাজারেরও বেশি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ২৪১ হেক্টর জমির পাট, আউশ ধান, আমন বীজতলা ও শাক-সবজি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই চারটি উপজেলার ৮১ কিলোমিটার সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় ১৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বন্যায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের চররতনপুর গ্রামের আজাহার আলীর সাড়ে চার বছরের ছেলে মেনহাজ মিয়া ও বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের চর বাটিকামারী গ্রামের আব্দুল হামিদ ইদার দেড় বছরের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের মৃত্যু হয়েছে।
এ দিকে গাইবান্ধায় নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রাম ভাঙনে এখন বিলুপ্ত প্রায়। জরুরিভাবে সেখানে জিওব্যাগ ফেলে গ্রামটিকে রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ভাঙনের ফলে কলমু এফএনসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় এক সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়ির আঙ্গিনায় খোলা আকাশের নিচে পড়াশোনা করছে। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে তাদেরকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে।
অপরদিকে বন্যায় জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষদের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক বাড়ির আঙ্গিনা ও ঘরে পানি ঢুকেছে। টিউবওয়েল ডুবে গেছে। গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছে লোকজন। প্রতিদিন সরকারিভাবে বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ দেয়া হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল।
কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. মতিয়ার রহমান বলেন, গোঘাট গ্রামের নদী ভাঙন রোধে প্রতিদিন ১৭ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। গত দুইমাসে এই গ্রামের দেড়শ পরিবারেরও বেশি নদী ভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তারা নিকটস্থ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা রোদ-বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে কষ্ট করে লেখাপড়া করছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইদ্রিশ আলী বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষদের মাঝে প্রতিদিন ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া বারবার বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়াও তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে।
রওশন আলম পাপুল/আরএআর/আরআইপি