এখনও নিজস্ব ভবন পায়নি এস এম সুলতান আর্ট কলেজ
ক্যাপশন : এস এম সুলতান আর্ট কলেজের দুটি টিনসেড নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে আছে।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। চিত্রা নদীপাড়ের লাল মিয়া খ্যাত এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান তিনি।
শিশুদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে সুপ্ত প্রতিভা এবং মানসিক বিকাশ সাধনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ছিল তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য।
তিনি শিশুদের ছবি আঁকার প্রতিষ্ঠান শিশুস্বর্গ ও যন্ত্র চালিত বড় নৌকা (যেখানে শিশুরা নৌকায় ঘুরে প্রকৃতির সানিধ্যে গিয়ে ছবি আঁকবে) তৈরি করেন। তার আরও স্বপ্ন ছিল আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠার। এরই ধারাবাহিকতায় শিল্পী সুলতানের মৃত্যুর পর ২০০৯ সালে শিল্পী সুলতানের বাগান বাড়ি শহরের পশ্চিম মাছিমদিয়ায় ‘এস এম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
দীর্ঘ এতগুলো বছর পর আর্ট কলেজের এখনও নিজস্ব ভবন নির্মাণ সম্ভব হয়নি। সুলতান কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত শিশুস্বর্গ ভবনের একটি বড় এবং দুটি ছোট কক্ষে চলছে ক্লাস, প্রশাসনিক ও অধ্যক্ষের কার্যক্রম। এছাড়া শিক্ষক সংকট এবং এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। সবকিছু মিলিয়ে সুলতান আর্ট কলেজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল-ঢাকা সড়কে শহরের পশ্চিম মাছিমদিয়ায় শিল্পী সুলতান তার জীবদ্দশায় ১ একর ৩ শতক জায়গা ক্রয় করে শিশুদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফলের গাছ, বসার জায়গা, পুকুর ও লালবাউল সম্প্রদায় নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। শিল্পীর মত্যুর ১৫ বছর পর নড়াইলের সুলতান ভক্ত, জেলা প্রশাসন এবং ঢাকা বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ২০০৯ সালের ১০ আগস্ট শিল্পী সুলতানের এ জায়গাকে নির্বাচন করে ‘এস এম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়’ গড়ে ওঠে। পরে মহাবিদ্যালয়ের জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশন শিল্পীর জায়গার পাশের ৬২ শতক জমি ক্রয় করে। ২০০৯ সালে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে এস এম সুলতান কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত শিশুস্বর্গ ভবনে অস্থায়ীভাবে এস এম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়। এ সময় সিদ্ধান্ত হয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এখানেই (শিশুস্বর্গ ভবনে) ক্লাস ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে। কিন্তু এতগুলো বছর পরও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভবন নির্মাণ হয়নি।
জানা যায়, মহাবিদ্যালয়ের জন্য ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে মহাবিদ্যালয়ের নির্ধারিত জায়গায় কলেজের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অস্থায়ীভাবে পাকা দেয়াল ওপরে টিনসেডের দুটি অস্থায়ী ভবনের কাজ শুরু হয়। কিন্তু কাজ আর এগোয়নি।

মহাবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য, এস এম সুলতান শিশু চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশনের সভাপতি শেখ আ. হানিফ বলেন, নিজস্ব ক্যাম্পাস, শিক্ষক স্বল্পতাসহ কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে এ সমস্যা খুব শিগগিরই কেটে যাবে বলে তিনি জানান।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আগামী ডিসেম্বর মাসে অস্থায়ী দুটি টিনসেড ভবন নির্মাণ শুরু হয়ে দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে এবং আগামী ২০১৮ সালের দিকে আর্ট কলেজের পূর্ণাঙ্গ ভবনের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে এর নকশা এবং প্লান নড়াইল পৌরসভা থেকে পাশ হয়েছে।
এস এম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অশোক কুমার শীল জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২ বছর মেয়াদি প্রি-ডিগ্রি এবং ৩ বছর মেয়াদি বি.এফ.এ পাস কোর্স চালু হয়েছে। বর্তমানে সুলতান কমপ্লেক্সের মধ্যে শিশু স্বর্গ ভবনের ৩টি কক্ষে বিভিন্ন বর্ষের পর্যায়ক্রমে ক্লাস, প্রশাসনিকসহ প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কার্যক্রম চলছে। শিক্ষক স্বল্পতার জন্য সভ্যতার ইতিহাস এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন বিষয়ে অতিথি শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ২১ জন শিক্ষক-কর্মচারি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদক লাভ করেন । এছাড়া লন্ডনের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘ম্যান অব এচিভমেন্ট’ সহ দেশি-বিদেশি বহু সম্মানে ভূষিত হন।
বরেণ্য এই শিল্পীর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জেলা প্রশাসন ও সুলতান ফাউন্ডেশন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকালে কোরআনখানি, সুলতান কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে শিল্পীর মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ, মাজার জিয়ারত, মিলাদ মাহফিল, শিশুদের চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা ও আলোচনাসভা।
সুলতানের শিল্পকর্মের বিষয় ছিল বাংলার কৃষক, জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার, মাঠ, নদী, হাওর, বাঁওড়, জঙ্গল, সবুজ প্রান্তর ইত্যাদি। চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি বাজাতে পটু ছিলেন তিনি। পুষতেন সাপ, ভাল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন প্রাণী।
শিল্পী সুলতানের আঁকা চিত্রকর্ম ১৯৫০ সালে লন্ডনে বিশ্ববিখ্যাত চিত্র শিল্পী পাবলো পিকাসো, ডুফি, সালভেদর দালি, পলক্লী, কনেট, মাতিসের ছবির সঙ্গে প্রদর্শিত হয়েছে।
হাফিজুল নিলু/এআরএস/জেআইএম