ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মাসিক বেতন মাত্র ২ হাজার ৫২০ টাকা

জেলা প্রতিনিধি | গাইবান্ধা | প্রকাশিত: ০৯:৫৩ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

২০১৩ সালে ২৫ শতাংশ বাড়ানোর পর থেকে একজন পোস্টা মাস্টার মাসিক ১ হাজার ২৬০ টাকা, পোস্টম্যান ১ হাজার ২৩০ টাকা ও রানার পেতেন ১ হাজার ১৮০ টাকা করে। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে শতভাগ বাড়ানোর পর থেকে একজন পোস্ট মাস্টার পাচ্ছেন ২ হাজার ৫২০ টাকা, পোস্টম্যান ২ হাজার ৪৬০ টাকা ও রানার পাচ্ছেন মাত্র ২ হাজার ৩৬০ টাকা করে। উপরে উল্লেখিত এই টাকার হিসাব গাইবান্ধার শাখা ডাকঘরের কর্মচারীদের।

ডাক বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৭৩ সালে শাখা ডাকঘরের একজন পোস্ট মাস্টারের মাসিক সম্মানী ভাতা ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করা হয়। এরপর ১৯৮০ সালে ৬৮ শতাংশ, ১৯৮১ সালে ৬৪ শতাংশ, ১৯৮২ সালে ৩০ শতাংশ, ১৯৮৪ সালে ২০ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ৫০.৮৮ শতাংশ, ১৯৯৫ সালে ২০ শতাংশ, ১৯৯৯ সালে ২০ শতাংশ, ২০০৪ সালে ১০ শতাংশ, ২০১০ সালে ৩৪ শতাংশ, ২০১৩ সালে ২৫ শতাংশ ও ২০১৬ সালে শতভাগ বাড়ানো হয়।

এছাড়া ২০০৪ সালে ১০ শতাংশ বাড়ানোর পর থেকে ২০১০ সালে ৩৪ শতাংশ বাড়ানোর আগে পর্যন্ত শাখা ডাকঘরের একজন পোস্ট মাস্টার ৭৫০ টাকা, পোস্টম্যান ৭৩৪ টাকা ও রানার ৭০৪ টাকা করে এবং ২০১০ সালে ৩৪ শতাংশ বাড়ানোর পর থেকে ২০১৩ সালে ২৫ শতাংশ বাড়ানোর আগে পর্যন্ত পোস্ট মাস্টার এক হাজার ৫ টাকা, পোস্টম্যান ৯৮৪ টাকা ও রানার ৯৪৩ টাকা করে মাসিক সম্মানী ভাতা পেয়েছেন।

গাইবান্ধা প্রধান ডাকঘর ও অবিভাগীয় ডাক কর্মচারী পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার সাত উপজেলায় ১২৬টি ডাকঘর রয়েছে। এরমধ্যে প্রধান ডাকঘর একটি, উপজেলা ডাকঘর ছয়টি, সাব ডাকঘর পাঁচটি এবং শাখা ডাকঘর রয়েছে ১১৪টি।

এসব শাখা ডাকঘরে কর্মরত পোস্ট মাষ্টার, পোস্টম্যান ও রানারদের সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয় না পোশাক, জুতা, চিঠি বিলি করার ব্যাগ। এছাড়া তারা পান না কোনো উৎসব ভাতাও। নির্বাচনের সময় ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত চালু রাখতে হয় ডাকঘর। কিন্তু অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনের জন্যও তারা পান না কোনো টাকা। শুধু তাই নয়, চিঠিপত্র পৌঁছানোর জন্য কোনো যানবাহনও সরকারিভাবে দেয়া হয়না তাদের।

এত কিছু না থাকার পরও গাইবান্ধার সাত উপজেলার ১১৪টি শাখা ডাকঘরের তিন শতাধিক পোস্ট মাস্টার, পোস্টম্যান ও রানার দায়িত্ব পালন করছেন সঠিকভাবে। রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছেন ডাকসেবা। মাস শেষে অল্প টাকা পাওয়ায় বর্তমানে এসব ডাক কর্মচারীর সংসার চলছে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে। ফলে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

এছাড়া ২০১৬ সালের আগস্ট মাস থেকে সাব ডাকঘরগুলোর সাব পোস্ট মাস্টর ৩ হাজার ৩০০ টাকা এবং চৌকিদার ও ঝাড়ুদার পাচ্ছেন মাত্র ২ হাজার ২৬০ টাকা।

সাদুল্লাপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের মহিষবান্দি শাখা ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য চাকরিজীবীর মতো আমরাও সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অফিস করি। কিন্তু মাসিক ২ হাজার ৫২০ টাকা সম্মানীর বাইরে কোনো সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছি না। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব বিপাকে আছি।

পলাশবাড়ী উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের পূর্ব গোপীনাথপুর শাখা ডাকঘরের পোস্টম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সারাদিন মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে চিঠি বিলি করি। বিশ্রাম নেয়ার বিন্দুমাত্র সময় পাই না। দিনভর এত পরিশ্রমের পর যা বেতন পাচ্ছি তা দিয়ে সংসার চলছে না। ধার দেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে।

সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ল্যাংগাবাজার শাখা ডাকঘরের রানার আব্দুল গণি মিয়া বলেন, বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আমার সাত সদস্যের সংসার। বড় ছেলে পঞ্চম ও ছোট ছেলেটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাদের পড়াশোনার খরচ ঠিকমতো বহন করতে পারছি না। যে কোনো সময় তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

সদর উপজেলার মালিবাড়ী ইউনিয়নের কিশামত মালিবাড়ী গ্রামের চাকরিপ্রার্থী মাইদুল ইসলাম বলেন, শাখা ডাকঘরের কারণে চাকরির দরখাস্ত করে সময়মতো চিঠি হাতে পাই। তা না হলে অনেক সমস্যায় পরতে হতো। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে খুব সহজেই জরুরি চিঠিও পাঠাতে পারি। তাই এই শাখা ডাকঘরগুলোকে টিকিয়ে রাখা দরকার।

বাংলাদেশ অবিভাগীয় ডাক কর্মচারি পরিষদ গাইবান্ধা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুকুমার চন্দ্র মোদক বলেন, ডাক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে হলে তাড়াতাড়ি এর উন্নয়ন করতে হবে। আমরা সরকারি সকল কাজ করলেও আমাদের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়নি। তাই শাখা পোস্ট মাস্টার, পোস্টম্যান ও রানারদের চাকরি জাতীয়করণ, ডাক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও রেশন ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানান এই ডাক নেতা।

রওশন আলম পাপুল/এমএএস/আইআই

আরও পড়ুন