ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পুলিশের উপর ‘নজরদারি’ করত সুমিত

জেলা প্রতিনিধি | চট্টগ্রাম | প্রকাশিত: ০৯:৩২ এএম, ০২ এপ্রিল ২০১৮

‘বিষয়টা যত সহজ ভাবছেন তত সহজ নয়। অনেক চালাক এই সুমিত আর তার সহযোগীরা। পুলিশকে ফাঁকি দিতে প্রযুক্তিকে এড়িয়ে তো গেছেই; কীভাবে যেন পুলিশের পদক্ষেপগুলো বার বার জেনে যাচ্ছিল তারা! আমার মনে হয় না বিষয়টা এখানেই শেষ।’

চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্র তমালের ওপর এসিড হামলার আসামি সুমিত ধর (৩০) ও মমিতা দত্ত অ্যানিকে (২৬) গ্রেফতারের বিষয়ে জানাতে গিয়ে জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি মো. কামরুজ্জামান।

গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশকে এড়িয়ে যেতে যা যা করা প্রয়োজন, সবই করেছে এই দম্পতি। ঘটনার পরই তারা ঢাকায় পালিয়ে যায়। ভাটারা এলাকায় যে বাড়িটিতে থাকতো, সেটি ছিল একেবারেই ধারণার বাইরের একটি প্লেস। দুই তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় তারা থাকতো। উপরে ওঠার জন্য স্বাভাবিক কোনো সিঁড়ি ছিল না। একটি ছোট্ট লোহার সিঁড়ি দিয়ে তারা চলাচল করতো।’

এডিসি কামরুজ্জামান আরও বলেন, ‘তারা নিজেরা কখনো ফোন ব্যবহার করতো না। অন্য নামে রেজিস্ট্রেশন করা দুটো সিম শুধু তারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করছিল। মাঝে মাঝে তাদের স্বজনরা ওখানে গেলে তাদের মোবাইল থেকে অপর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতো।’

শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে কথা হচ্ছিল তমালের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, তার সঙ্গে নয় মাস প্রেম করার পর অ্যানি জানায় কয়েক মাস আগেই তার বিয়ে হয়েছে। প্রেমিকার এমন জবাবে উত্তেজিত তমাল থাপ্পড় দেয় অ্যানিকে। আর ওই থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে তমালের মুখে এসিড ছুঁড়ে মারে অ্যানির স্বামী সুমিত ও তার সহযোগীরা।

অভিযুক্ত মমিতা দত্ত অ্যানি ও তার স্বামী সুমিত দত্ত উভয়ই চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। তমালের দূর সম্পর্কের আত্মীয় অ্যানি।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার হাসান মো. শওকত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ মামলাটি আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল। বেশ চালাক এই সুমিত ও তার সহযোগীরা। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তাদের গ্রেফতার করা গেছে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘটনার পর সুমিত ও অ্যানি গ্রেফতার এড়াতে ঢাকায় চলে যান। সেখানে মমিতা একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। সুমিত কয়েকটি টিউশনি নেন। এভাবেই তাদের সংসার চলছিল। এদিকে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজেও বের করতে পারছিল না তাদের। কেন পারছিলো না এটি একটি রহস্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরের এপ্রিলে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আসে মামলাটি। কিন্তু কোনোভাবেই এই দুজনকে ট্রেস করা যাচ্ছিল না। শেষে খুব দুর্বল একটি সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে সুমিত ও অ্যানির ঠিকানা। এখানে প্রযুক্তির সহায়তা যেমন নিয়েছি, তেমনি সুমিত ও অ্যানির পরিবারের সদস্যদের উপর আমাদের নজর ছিল সার্বক্ষণিক।’

২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নগরীর কোতয়ালী থানার গুডস হিলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তমাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৬ সালের শেষের দিকে ‘প্রজাপতির ডানা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে আমার কাছে রিকোয়েস্ট আসে। আমি রিকোয়েস্টটি একসেপ্ট করি। পরে তার সঙ্গে চ্যাটিংয়ে কথা হয়। জানায় সে কলকাতা থেকে বলছে। এভাবেই দু’মাস যাওয়ার পর ওই আইডি থেকে জানানো হয়, তার কাকার সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছে সে। দেখা করবে।’

তমাল বলেন, ‘ফেসবুকেই নির্ধারিত হয় আমরা গুডস হিলের সামনে দেখা করবো। আমি সন্ধ্যার দিকে ওই এলাকায় পৌঁছাই। তখন দেখি দুই যুবক বেশ বড়বড় চোখ করে আমাকে লক্ষ করছে। এদিকে আমি অপেক্ষা করছিলাম ‘প্রজাপতির ডানার’। এরই মধ্যে তিন-চার মিনিট পর হঠাৎ ওই যুবকরা আমার মুখে এসিড ছুঁড়ে মারে। তখন আমি কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। সারা মুখ খুব বেশি জ্বলছিল। এর মাঝে একজনকে একটু আবছা আবছা চিনতে পারি। সে সুমিত। অ্যানির স্বামী।’

তমাল বলেন, “আমি অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে যখন পানি পানি চিৎকার করছিলাম তখন একজন যুবক বলছিল, ‘অ্যানির সঙ্গে প্রেম করার মজা দেখ’।”

এসিডে আক্রান্ত হয়ে তমালের এক চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। আরেকটি চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া তার মুখমণ্ডলও বিকৃত হয়ে গেছে।

এমবিআর/জেআইএম

আরও পড়ুন