ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মৌ চাষে বাজিমাত

জেলা প্রতিনিধি | খাগড়াছড়ি | প্রকাশিত: ১০:৪৯ এএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। কৃষি কাজ বা অন্য পেশার পাশাপাশি মৌ চাষ করে অনেকেই বাড়তি আয় করছেন। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মাটিরাঙ্গায় ৩০ জন আত্মপ্রত্যয়ী যুবক বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন।

গুণগত মান ভালো হওয়ায় এখানে উৎপাদিত মধু খাগড়াছড়ি জেলাজুড়ে সমাদৃত। মৌ চাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হবে, অন্যদিকে চাষিদের আর্থিক স্বচ্ছলতাসহ মোটা অঙ্কের রাজস্ব পাবে সরকার এমনটাই জানিয়েছেন মৌ চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

২০০৬ সালে বিসিক থেকে মধু চাষের উপর প্রশিক্ষণ শেষে ৫টি মৌ বক্স দিয়ে মৌ চাষ শুরু করেন মো. মাহবুবুর রহমান শরীফ। নিজস্ব উদ্যোগে আগ্রহী কয়েকজনকে মৌ বক্স দেন। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও বিপণন সমস্যার কারণে প্রশিক্ষণ নেয়ার পরও মৌ চাষের স্বপ্ন থমকে দাঁড়ায়।

পরে ২০১৭ সালের দিকে বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম মিয়া। তার হাত ধরেই আলোর মুখ দেখে মৌ চাষ। এমনটাই জানিয়েছেন মাটিরাঙ্গার সফল মৌচাষি মো. মাহবুবর রহমান শরীফ।

উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় মৌচাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে মাটিরাঙ্গা সদর ছাড়াও শান্তিপুর, তাইন্দং, বেলছড়ি, আদর্শ গ্রামের ৩০ জন যুবক মৌ চাষে সম্পৃক্ত আছেন।

২০টি মৌ বক্স থেকে বছরে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করেন বলে জানান মৌচাষি শরীফ। এছাড়া স্থানীয়ভাবে মধুর চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে বিপণনে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি খাঁটি মধু ১২শ টাকা দরে বিক্রি হয়। স্থানীয় মৌচাষিদের সংগঠন ‘জাগরণ মৌচাষি কল্যাণ সমিতির’ মাধ্যমে মধু বাজারজাত ও বিপণন করা হয় বলেও জানান তিনি।

মাটিরাঙ্গার তাইন্দংয়ের মৌচাষি মো. শাহ আলম ও মাটিরাঙ্গা সদরের দেবাশীষ চাকমা জানান, ফলমুল ও সরিষার আবাদ বেশি হলে মধু চাষ বেশি হবে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে মৌ চাষে যথাযথ প্রশিক্ষণসহ সরকারি ঋণ সহযোগিতা পাওয়া গেলে মৌ চাষ সম্প্রসারিত হবে।

এছাড়া সরকারিভাবে মধু কেনার ব্যবস্থা করা হলে মৌ চাষিরা আরো লাভবান হবেন বলে মনে করেন তারা।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম মিয়া জানান, স্থানীয়ভাবে মৌ চাষ বেশ জনপ্রিয় হলেও এর শুরুটা বেশ কঠিন ছিল। রানী মৌমাছির সঙ্কট, প্রশিক্ষণ, আর্থিক অস্বচ্ছলতা আর মধু উৎপাদনে ছিল নানা জটিলতা। পরে কৃষি বিভাগ মৌ চাষে আগ্রহীদের বাছাই করে তাদেরকে মৌ চাষে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলে।

শুরুর দিকে মৌচাষিদের সঙ্গে নিয়ে জঙ্গল থেকে রাণী মৌমাছি সংগ্রহের কথা জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম মিয়া জানান, এটা খুব সুখের ছিল না। মৌ চাষের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় মৌ চাষ যখন মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম তখন উপজেলা পরিষদ থেকে মৌচাষিদের বিনামূল্যে মৌ বক্সসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রদান করা হয়। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

পাহাড়ে ফুলের মধু বেশ সহজলভ্য হওয়ায় মাটিরাঙ্গায় বাড়তে থাকে মধু উৎপাদনের পরিধি। মাটিরাঙ্গায় বছরে প্রায় ৮শ কেজি মধ্য উৎপাদিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব মধু স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যা থেকে আয় হচ্ছে বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকা।

মাটিরাঙ্গার প্রশিক্ষিত মৌচাষিদের সরকারি ঋণ সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে মৌ চাষে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মৌ চাষ সম্প্রসারণে উপজেলা পরিষদ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এফএ/আরআইপি

আরও পড়ুন