মাটিরাঙ্গায় স্বজন হারানোর বেদনার উপর ভর করেছে গ্রেফতার আতঙ্ক
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় নিজের বাগানের গাছ কাটা ও পরিবহনকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে বিজিবি সদস্য শাওন খান নিহতের ঘটনায় বিজিবির মামলা দায়েরের পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্বজন হারানোর বেদনার উপর গ্রেফতার আতঙ্ক ভর করেছে এলাকাজুড়ে। ঘটনাস্থল গাজীনগরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছে সাধারণ মানুষ। বিজিবির দায়ের করা মামলায় এলাকায় ক্ষোভের পাশাপাশি নিহতদের পরিবারে এখনও চলছে শোকের মাতম।
এদিকে গ্রামবাসীর দাবি সেদিন বিজিবির হাবিলদার মো. ইসহাক কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই আহাম্মদ আলী, আকবর আলী, সাহাব মিয়া (মুছা মিয়া) ও মফিজ মিয়াসহ নিরপরাধ মানুষকে সামনে থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। কিন্তু সত্য ঘটনাকে আড়াল করতেই উল্টো সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা করেছে। এ মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও অজ্ঞাতনামা আরও ৬০/৭০জনকে আসামি করায় গোটা গ্রামের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিজিবির গুলিতে নিহত মো. মফিজ মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, আমি স্বামীকে হারিয়েছি। আমার মেয়ের জামাইকে হারিয়েছি। আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎিসাধীন। আমাদেরকে গুলি করে আবার আমাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা করেছে। স্বামীসহ স্বজনদের গুলি করে হত্যার দায়ে বিজিবির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় মো. দুলাল মিয়া বলেন, ওই দিনের ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সামনে সত্য কথা বলার কারণে সাধারণ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে বিজিবি মিথ্যা মামলা করেছে। আমরা বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছি না। ভয় আর আতঙ্কে সারারাত জঙ্গলে কাটিয়েছি।

মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সেদিন সামনে থেকে ঘটনা দেখেছি। আমরা সাংবাদিকদের সত্য ঘটনা জানিয়েছি। এখন আমরা দোকান খুলতে পারি না। এখন তারা (বিজিবি) মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করছে।
এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন কাজ করছে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী রোববারের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে।
প্রসঙ্গত, গেল মঙ্গলবার (৩ মার্চ) খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় নিজের বাগানের গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে বিজিবি সদস্য শাওন খান নিহতের ঘটনায় মামলা করেছে বিজিবি। ঘটনার দু’দিন পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ৪০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের (বিজিবি) হাবিলদার ইসহাক আলী বাদী হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে মাটিরাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অজ্ঞাত নামা আরও ৬০-৭০ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় সেদিনের সংঘর্ষে নিহত আলী আকবর, আহাম্মদ আলী, সাহাব মিয়া (মুছা মিয়া) ও মো. মফিজ মিয়াকেও আসামি করা হয়েছে।
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এমএএস/জেআইএম