সালিশে তালাকের রায় শুনে আত্মহত্যা করলেন গৃহবধূ
নরসিংদীর মাধবদীতে সালিশে তালাকের রায় শুনে পারভীন আক্তার (৪০) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। সোমবার (২৪ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার সাগরদী গ্রামে থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত পারভীন আক্তার মাধবদী থানার পাইকারচর ইউনিয়নের সাগরদী গ্রামের সাইদ মিয়ার মেয়ে ও একই গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়ার স্ত্রী।
নিহতের বাবা সাইদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানাসহ স্থানীয় মাতব্বররা এক পক্ষের হয়ে তালাকের রায় দিয়েছে। তাদের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের কারণেই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন প্রেমের পর একই গ্রামের ওসমান মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিয়ে হয় পারভীনের। এটি উভয়েরই দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরে সেটা সালিশ পর্যন্ত গড়ায়।
এর জের ধরে সোমবার উভয়পক্ষকে নিয়ে মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানা ও পাইকাচর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর আলমসহ এলাকার মাতব্বররা সালিশে বসেন। তবে সালিশে উপস্থিত হননি গৃহবধু পারভীন। তার বাবা সাইদ মিয়া উপস্থিত ছিলেন। পরে স্বামীর পক্ষের কথা শুনে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত দেন বিচারকরা। বিয়ের কাবিননামা এক লাখ ৫০ হাজার টাকা হলেও সালিশে মাত্র ২০ হাজার টাকা মেয়ের বাবাকে দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রস্তাব দেন বিচারকরা। কিন্তু এই রায় মানেননি পারভীনের বাবা। পরে এ খবর শুনে ক্ষোভে-দুঃখে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন চার সন্তানের জননী পারভীন। খবর পেয়ে রাতে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহতের ভাই কাউছার মিয়া বলেন, সালিশে মাতব্বরদের চাপেই কারণেই বোন জামাই আমার বোনকে তালাক দিতে রাজি হয়েছে। সালিশে আমার বোনকে না রেখে তারা নিজেদের ইচ্ছামত রায় দিয়েছে। যেখানে কাবিননামা দেড় লাখ টাকা সেখানে তারা দিয়েছে ২০ হাজার টাকা। এতে অপমানে ও ক্ষোভে আমার বোন বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে।
সাইদ মিয়া বলেন, ২০ হাজার টাকা দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত জানান মাতব্বররা। টাকা দিয়ে আমি কি করবো? মাতব্বরদের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের কারণেই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
পাইকাচর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাহাঙ্গীর দুই বউকে নিয়ে ঠিকমতো সংসার চালাতে পারেন না। এজন্য তিনি সালিশে দ্বিতীয় স্ত্রী পারভীনকে তালাক দেবেন বলে জানান। কিন্তু পারভীন উপস্থিত না থাকায় কোনো রায় হয়নি। আর জরিমানার ব্যাপারে একেকজন একেক কথা বললেও কোনো টাকা নির্ধারণ করা হয়নি। সালিশে তালাক দেয়ার জন্যও কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি।
এ ব্যাপরে মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানার মোবাইলে ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মাধবদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান বলেন, একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে এমন খবরের ভিত্তিতে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। পরে জানতে পেরেছি এর আগে স্থানীয়রা উভয় পক্ষকে নিয়ে একটি সালিশ বৈঠক করেছেন। তবে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সঞ্জিত সাহা/আরএআর/পিআর
সর্বশেষ - দেশজুড়ে
- ১ ১৬ ডিসেম্বরের প্রত্যয়েই দেশ পুনর্নির্মাণের সুযোগ করে নিতে পেরেছি
- ২ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হত্যাচেষ্টার মধ্যে কোনো বীরত্ব নেই
- ৩ জাগো নিউজে সংবাদ প্রচারের পর নিজের ঠিকানা পেলেন বীরাঙ্গনা যোগমায়া
- ৪ হঠাৎ ফেসবুকে রাঙ্গার ক্ষমা চাওয়ার ভিডিও
- ৫ শহীদ মিনারে মুক্তিযুদ্ধের গ্রাফিতি মুছে আলপনা, সমালোচনায় তৎপর