মনের আলোয় সব কাজ করেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পারিছা
চোখের আলো না থাকলেও অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে জীবন যুদ্ধে হার মানেননি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গৃহবধূ পারিছা বেগম। নিজে প্রতিবন্ধী হলেও হাল ছাড়েননি সংসারের। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামী, মানসিক ভারসাম্যহীন ননদ, ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই সন্তানকে নিয়ে চলছে তার জীবন সংগ্রাম। তবে আজও তার কপালে সরকারি কোনো সহযোগিতা জোটেনি। অনেকেই সরকারি সহযোগিতা দেয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের শাহিনের স্ত্রী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পারিছা বেগম। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামী শাহিন, মানসিক ভারসাম্যহীন ননদ রঙিলা আর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। চোখের আলো না থাকলেও মনের আলোয় পথ চলেন পারিছা। স্বামী শাহিনকে দিনমজুরের কাজে পাঠিয়ে আবার সঙ্গে করে নিয়ে আসেন তিনি। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় শাহিনের মজুরি দেয়া হয় অর্ধেক। এই সামান্য টাকা দিয়ে সংসার চালানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হওয়ায় হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন তিনি। অল্প দিনেই কিছুটা স্বস্তি আসে সংসারে।
বছর খানেক পর অনেক আশা নিয়ে সন্তান নেন। কিন্তু পরপর দুটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্ম হয়। শুরু হয় তাদের অভিশপ্ত জীবন সংগ্রাম। তবুও হাল ছাড়েননি পারিছা। ভিক্ষাবৃত্তি না করে পরিশ্রম করে খেয়ে না খেয়ে সংগ্রাম করছেন। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইও ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রবাসী কয়েকজন যুবক কোনো রকমে তাদের থাকার ঘরটি ঠিক করে দিয়েছেন। এখন ওই কুঁড়েঘরে ছেঁড়া কাঁথায় শুয়েই রঙিন স্বপ্ন দেখেন পারিছা।
গৃহবধূ পারিছা বলেন, অনেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বলে শাহিনকে ঘৃণা করলেও স্বামী হিসেবে তার যত্নের কমতি করি না। আমাকে সব কাজই করতে হয়। চোখের আলো না থাকলেও মনের আলোয় সব কাজ করতে পারি। স্বামীর ভালোবাসা আর সহযোগিতাই সংসারের বড় সম্পদ।
তিনি আরও বলেন, বাড়িতে থাকার ঘর ছিল না। স্থানীয় লোকজন ও প্রবাসী কিছু যুবক কোনো রকম থাকার ঘরটি ঠিক করে দিয়েছেন। এখন ওই কুঁড়েঘরে ছেঁড়া কাঁথায় শুয়েই রঙিন স্বপ্ন দেখা।
প্রতিবেশীরা জানান, পারিছা নিজে অন্ধ হয়ে গোটা সংসারটি যেভাবে টিকিয়ে রেখেছেন তা একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মেয়ের পক্ষে সম্ভব না। অনেকের সংসারে ছোটখাটো মতবিরোধ রয়েছে। তবে পারিছার সংসারে অভাব থাকলেও আছে গভীর ভালবাসা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম জানান, এ ধরনের একটি পরিবার রয়েছে ভবানীপুরে এটা তার জানা নেই। বিষয়টি দেখে সহযোগিতা করা হবে।
গাংনী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান জানান, গোটা পরিবারটি একটা সঙ্কটের মধ্যে পড়ে আছে। জনপ্রতিনিধিদের উচিৎ ছিল এদের জন্য কিছু করার। পরিবারটির খোঁজ নিয়ে সরকার প্রদেয় সুবিধা দেয়া হবে।
আসিফ ইকবাল/আরএআর/এমএস