শীতের রাতে চা পাতা চুরির হিড়িক
ফাইল ছবি
চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজার। জেলার সবকটি উপজেলায় চা বাগান রয়েছে। এই চায়ের জন্য জেলার খ্যাতি দেশজুড়ে। তবে কিছুদিন ধরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানের সেকশন থেকে শীতের রাতে চা পাতা চুরির হিড়িক পড়েছে। ফলে শ্রমিকরা নির্ধারিত পরিমাণে পাতা উত্তোলন করতে পারছেন না। এজন্য ব্যাহত হচ্ছে চায়ের উৎপাদন।
চা শ্রমিকদের অভিযোগ, কাঁচা চা পাতা পাচার দেখেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কর্তারা রহস্যজনকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেন না।
তাদের অভিযোগ, প্রায়ই একটি চক্র রাতের আঁধারে প্লান্টেশন এলাকা থেকে কাঁচা চা পাতা চুরি করে। রাতে সেকশনে প্রবেশ করে কাঁচি দিয়ে চা গাছের কচি পাতা কেটে বস্তাভর্তি করে নেয়। এরপর পাতাভর্তি ট্রাক ও পিকআপে করে পাচার করা হয়।
তারা বলেন, চোরাই পাতাভর্তি গাড়ি কুলাউড়া ও রাজনগর সড়ক দিয়ে বিভিন্ন ছোট আকারের চা বাগানে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
সম্প্রতি কমলগঞ্জের শমশেরনগর চা বাগানের ফাঁড়ি চা বাগান বাঘিছড়া থেকে ব্যাপকহারে কাঁচা চা পাতা চুরি হয়েছে। এতে নারী শ্রমিকরা কাজে গিয়ে সেকশনের চা গাছে পাতা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এর প্রতিবাদ জানিয়ে তারা কিছু সময় কর্মবিরতি পালন করেন ও বাগান ম্যানেজমেন্টকে বিষয়টি অবহিত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
বাঘিছড়া চা বাগানের নারী শ্রমিক সুফলা বাউরী, সুজাতারিকিয়াশন, আরতি উরাং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেকশনে গেলাম পাতি (চা পাতা) উঠাতে। গিয়ে দেখি রাতেই এগুলো চুরি হয়ে গেছে। এখন আমরা কোথা থেকে চা পাতা উত্তোলন করব। বাগানে পাহারাদার থাকে দেখাশুনার জন্য। এরপরও সেকশন থেকে কঁচি চা পাতা চুরি হওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ম্যানেজমেন্টকে বলেছি।
বাঘিছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি লছমন রবিদাস, কানিহাটি চা বাগানের সভাপতি প্রতাপ রিকিয়াশন বলেন, বাগান থেকে কাঁচা চা পাতা চুরি হচ্ছে। এর ফলে সেকশনের চা গাছ থেকে নারী শ্রমিকরা পাতা উত্তোলন করতে পারছে না। তাদের নিরিখ (নির্ধারিত পরিমাণ) পূরণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে।
তারা আরও বলেন, একই সঙ্গে ছায়াদানকারী গাছ চুরি হয়ে যাওয়ায় টিলাগুলো বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে। এজন্য চা গাছে ছায়াও থাকবে না। ফলে বাগানের বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমরা ম্যানেজমেন্টকেও বলেছি।
শমশেরনগর কানিহাটি চা বাগানের শ্রমিক নেতা ও ইউপি সদস্য সীতারাম বীন বলেন, একজন নারী চা শ্রমিককে প্রতিদিন গড়ে নির্ধারিত ২২ কেজি চা পাতা উত্তোলন করতে হয়। এরপর বাড়তি চা পাতা তুলে। তবে রাতে প্লান্টেশন এলাকা থেকে চুরি হওয়ায় চা শ্রমিকরা নির্ধারিত পরিমাণ চা পাতা তুলতে পারছেন না। এসব বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
কমলগঞ্জের বিভিন্ন চা বাগান ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করে চা বাগানের প্লান্টেশন এলাকা থেকে প্রতিরাতে কাঁচা চা পাতা চুরির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে শমশেরনগর চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, চা বাগানের গাছ ও কাঁচা চা পাতা চুরির বিষয়ে শ্রমিকরা লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, চা বাগান থেকে কাঁচা চা পাতা চুরির গুঞ্জন শুনেছি। তবে সুনির্দিষ্ট করে কোনো চা বাগান থেকে এখনও অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ হলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এফএ/এমকেএইচ