ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মরা কুদালীছড়ায় ফিরবে প্রাণ

জেলা প্রতিনিধি | মৌলভীবাজার | প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বর্ষাকালে নৌকায় চড়ে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাতায়াত ছিল একসময়। সেই গল্প লোকমুখে শোনা যেত। বয়স্করা যারা দেখেছেন তাদের কাছে এটি যেন এক স্মৃতি। আর বর্তমান প্রজন্মের কাছে শুধুই ইতিহাস। বলছি মৌলভীবাজার শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কুদালীছড়ার কথা।

বর্ষায় একদিকে শহরের বর্জ্য আর পাহাড়ের উঁচু টিলা থেকে নেমে আসা পানিতে ছড়াটি হারাতে থাকে যৌবন। কয়েকযুগ ধরে খনন না করায় ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছে তার ঐতিহ্য। ফলে হাওরজুড়ে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। নষ্ট হয় কৃষকের ফসল। আর ছড়াটি পড়ে থাকে অবহেলায়।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর, গিয়াসনগর ও নাজিরাবাদসহ তিনটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষকের কাছে হৃৎপিণ্ডের মতো এই কুদালীছড়া। তিন ইউনিয়নের কৃষকদের সেচ কাজের একমাত্র অবলম্বন ছড়াটি।

জগন্নাথপুর গ্রামের আব্বাস উদ্দিন বলেন, এই হাওরের অতীত ঐতিহ্য বেশ সমৃদ্ধ। একটা সময় ছিল যখন ভরা যৌবনে ভরপুর এই কুদালিছড়া দিয়ে নৌকা চালিয়ে বর্তমান সময়ে বিলুপ্ত প্রায় নানা রকমের দেশীয় মাছ ধরে নিজেদের খাবারের প্রয়োজন মেটাতেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

দীর্ঘদিন পর ২০১৭ সালে মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান ছড়াটি খননের উদ্যোগ নেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পৌরসভা এলাকা ও কুদালীছড়ার আট কিলোমিটার খনন করে বিআইডিসি।

বর্তমানে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২নং গিয়াসনগর ইউনিয়নের ভূজবল অফিস বাজার এলাকা থেকে ছিকরাইল পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার জায়গা জুড়ে খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ৬৪ জেলার ছোট নদী-খাল ও জলাশয় খনন প্রকল্পের মাধ্যমে এক কোটি চার লাখ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে তারা।

২০ জানুয়ারি এই প্রকল্প কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ।

এরপর থেকে দ্রুত গতিতে তিনটি এক্সকেভেটর দিয়ে শুরু হয় খাল খননের কাজ। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত খালের সাত মিটার গভীর থেকে জমে থাকা মাটি তুলে ফেলা হচ্ছে খালের পাড়ে। এই মাটি দিয়েই দুপাড়ে তৈরি হচ্ছে বাঁধ।

river1

পরবর্তীতে বাঁধ ড্রেসিং করে তৈরি হবে কাঁচা রাস্তা। বর্ষায় বাঁধ যাতে ভেঙে না যায় সেজন্য বাঁধের ওপর দিয়ে তৈরি হওয়া রাস্তায় সৌন্দর্য বর্ধনে লাগানো হবে হাজারো হীজল-করচ গাছ।

কুদালীছড়ার দুপাড়ে হিজল-করচ লাগানো হলে খালের দুই দিকের হাওরের প্রকৃতিতে আসবে এক ভিন্ন মাত্রা। খাল খনন, বৃক্ষ রোপণ এবং রাস্তা ড্রেসিং- এই তিনটি কাজ বাস্তবায়ন হলে এলাকার পুরো চিত্র পাল্টে যাবে। তৈরি হবে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাও।

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কুদালীছড়া ফিরে পাবে তার ভরা যৌবন আর নৈসর্গিক সৌন্দর্য এমন ধারণা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

পাউবোর কর্মকর্তারা জানান, ১৫ মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কুদালীছড়া মৌলভীবাজারের প্রাণ। কুদালীছড়ায় বিআইডিসি প্রথমে খনন করে আর পৌরসভার অংশ পৌরসভা খনন করে। এখন কুদালীছড়া ভুজবল থেকে হাইল হাওর পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড খনন করছে। এই খনন কাজ সমাপ্ত হলে কুদালীছড়ার উভয় পাড়ে যে জমি রয়েছে সেগুলোতে ফসল উৎপাদন করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, যদি মনু নদী থেকে একটি ক্যানেল করে কুদালীছড়ায় পানি দিতে পারি তাহলে কৃষিতে ব্যাপক বিপ্লব সাধিত হবে মৌলভীবাজারে। কারণ মোস্তফাপুর, গিয়াসনগর ও নাজিরাবাদ ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ফরহাদ জানান, কুদালীছড়ার সাথে শুষ্ক মৌসুমে মনু নদীর একটা কানেকটিং সোর্স হবে। মৌলভীবাজার শহরের পৌর এলাকায় যে জলাবদ্ধতা থাকে সেটা নিষ্কাশন হবে এই কুদালীছড়ার মাধ্যমে।

তিনি জানান, কুদালীছড়া খাল খনন শেষে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে ফসল উৎপাদন করা যাবে। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেচ প্রকল্প গ্রহণের লক্ষে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছে।

এদিকে কুদালীছড়ার পৌরসভার অংশে গাইড ওয়াল নির্মাণ কাজ শুরু হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বলেও জানান তিনি।

এসএমএম/এমএস