ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

শিকলে বাঁধা দুরন্ত কিশোরী আল্পনার জীবন

জেলা প্রতিনিধি | শেরপুর | প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ২২ এপ্রিল ২০২১

টানা এক যুগ ধরে শিকলবাঁধা জীবন পার করছেন শেরপুরের মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরী আল্পনা আক্তার (২০)। যে বয়সে নূপুরের ছন্দ তুলে ছুটে বেড়ানোর কথা আল্পনা আক্তারের সেই বয়সে তাকে শিকলে বন্দি করে রেখেছে পরিবার।

আল্পনা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গুরুচরন দুধনই গ্রামের দিনমজুর সিদ্দিক আলীর মেয়ে। এক ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে আল্পনা তৃতীয়।

২০০১ সালে আল্পনার জন্ম হয়। ২০০৮ সালে ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে যায় আল্পনা। সেখানে হঠাৎ করেই জ্বর হয় তার। এরপর থেকেই মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া আল্পনার। এরপর চিকিৎসা করালেও তেমন কোনো ফল মেলেনি; বরং বাড়তেই থাকে অসুখ। শেষমেশ ২০০৯ সাল থেকে শিকলে বন্দি করে রাখা হয় আল্পনাকে।

আল্পনার বাবা দিনমজুরি করে যা পান তাই দিয়ে চলে তাদের সংসার। তার বাবাও অসুস্থ। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারটির পক্ষে আল্পনার চিকিৎসার ব্যয় চালানো অসম্ভব। এরইমধ্যে তার চিকিৎসার খরচ চালাতে সহায় সম্বল সব বিক্রি করেছেন তার বাবা। পরে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া একটি দূর্যোগ সহনীয় ঘরে তাদের ঠাঁই হয়েছে। মেয়ের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান ও সরকারের সহযোগিতা চায় তার পরিবার।

আল্পনার বাবা দিনমজুর সিদ্দিক আলী বলেন, মেয়ের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ করেছি। এখন আর টাকা নেই আমার। মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে আমি ১০ শতাংশ জমি, ৫টি গরু বিক্রি করেছি। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা ঋণও করেছি। এখন ইচ্ছা থাকার পরও মেয়েকে ভালো চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমি নিজেও অসুস্থ। মেয়ের চিকিৎসা করাতে গেলে, নিজের চিকিৎসা করাতে পারি না।

jagonews24

আল্পনার মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘সরকার আমাদের একটা ঘর দিছে। সেই ঘরের একটি কক্ষে আল্পনা থাকে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধী ভাতা পায়নি আমার মেয়ে। মেয়ের যন্ত্রণায় আমি শান্তিমতো খাইতে পারি না, রান্নাও করতে পারি না। অতিষ্ঠ করে ফেলেছে আমাকে।’

স্থানীয়রা জানান, আগে মেয়েটি সুস্থ ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই মাথায় সমস্যা হয়েছে। চিকিৎসা করালে ভালো হওয়ার সম্ভবনা আছে।

প্রতিবেশী হানিফ মিয়া বলেন, ‘আমরা শুনলাম মেয়েটা একদিন ঢাকায় গেল। সেখান থেকে জ্বর নিয়ে বাড়িতে আসার পর থেকেই মানসিক সমস্যা শুরু হয়েছে। তার বাবা কয়দিন চিকিৎসা করালো কিন্তু ভালো হয়নি। এজন্য শিকলে বেঁধে রেখেছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম ওয়ারেজ নাঈম বলেন, আল্পনার পরিবারের কথা শুনে সরকার থেকে একটি দুর্যোগ সহনীয় ঘর দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক স্মার্ট কার্ডও দিয়েছি। কিন্তু প্রতিবন্ধী ভাতা এখনো পাচ্ছে না। আমরা শিগগিরই আল্পনার জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে দেব। আমরা সার্বিকভাবে আল্পনা ও তার পরিবারের পাশে আছি এবং থাকব।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. একেএম আনোয়ারুর রউফ বলেন, শিকলে বন্দি করে রাখা একটি অমানবিক কাজ। মানসিক সমস্যার চিকিৎসা আছে। আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা তার চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করে দেব।

ইমরান হাসান রাব্বী/এফএ/এমকেএইচ