ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বিপুল সম্পদের মালিক ঝালকাঠির সাব-রেজিস্ট্রারের স্ত্রী

মো. আতিকুর রহমান | ঝালকাঠি | প্রকাশিত: ১০:৫৭ এএম, ১৪ জুন ২০২১

গৃহিণী হয়েও অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন ঝালকাঠি সদর সাব-রেজিস্ট্রার মো. মজিবর রহমান স্ত্রী ইসরাত জাহান। তার এই বিপুল সম্পদের উৎস খুঁজতে তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। করা হয় মামলা। এরপর উঠে আসে তার স্পদের মালিক হওয়ার রহস্য। দুদকের তদন্তে উঠে আসে, সাব-রেজিস্ট্রার মো. মজিবর রহমান স্ত্রী ইসরাত জাহানকে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের তিনটি ফ্ল্যাট; নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও পটুয়াখালীতে ৪২ শতাংশ জমির মালিক বানিয়েছেন। ৪৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংকে নগদ ৩৫ লাখ টাকা জমাও রেখেছেন তার নামে।

জ্ঞাত আয়ের বাইরে এক কোটি ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা অর্জনের অভিযোগে গত ১০ জুন মজিবর রহমান ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহানকে আসামি করে মামলা করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান সরকার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

দুদকের মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত এক কোটি ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দুদক সূত্রে জানা যায়, অবৈধ সম্পদ বৈধ করতে স্ত্রীর নামে ব্যবসায়িক জাল কাগজপত্র তৈরি করেন স্বামী মজিবর রহমান। তার এমন অপকর্মের ভুক্তভোগী হয়েছেন স্ত্রী। এখন দুর্নীতি মামলার প্রধান আসামি স্ত্রী ইসরাত। সহযোগী হিসেবে আসামি করা হয়েছে সাব-রেজিস্ট্রার স্বামী মজিবুর রহমানকে।

দুদক সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার ভূঁইঘর মৌজায় ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ, মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে ১০ শতাংশ এবং পটুয়াখালী জেলার বাউফলে ২৯ শতাংশ জমি রয়েছে ইসরাতের নামে। এ ছাড়া ঢাকার শ্যামপুর থানার জুরাইনের কেয়ারীনগর অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টে ১০১৬ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট (বিল্ডিং নং- ৭, ফ্ল্যাট নং- ই ৪), একই প্রজেক্টে ১০৬৯ বর্গফুটের আরও একটি ফ্ল্যাট (বিল্ডিং নং- ৭ , ফ্লাট নং- এ ৪) এবং ৫৮৩ বর্গফুটের পৃথক একটি ফ্ল্যাটের মালিক গৃহিণী ইসরাত। রয়েছে ৪৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংকে নগদ জমা আছে ৩৫ লাখ টাকা। যদিও এজাহারে তিনটি ফ্ল্যাটের দালিলিক মূল্য আমলে নেয়া হয়েছে। ফলে প্রকৃত বাজারমূল্য আসেনি মামলায়।

ইসরাত জাহানের আয়কর নথিতে আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে, ‘মেসার্স জেএম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামে কাগুজে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে ২৫ লাখ ৯২ হাজার ৯৬৫ টাকা, কৃষি খাত থেকে আট লাখ ২০ হাজার টাকা এবং বাড়িভাড়া থেকে তিন লাখ ৫৮ হাজার টাকার আয় দেখানো হয়েছে।

ইসরাত জাহানের নামে পূবালী ব্যাংকের ধোলাইপাড় শাখা ও হোটেল ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল শাখার হিসাবে বিভিন্ন সময় স্বামী মজিবর রহমানের কর্মস্থল থেকে নিয়মিত লেনদেন হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় সাব-রেজিস্ট্রার মজিবুর অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ স্ত্রীর আয়কর নথিতে দেখিয়ে বৈধ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে এসব অর্থ অর্জিত বলে মনে করে দুদক।

এ বিষয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান সরকার গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অনুসন্ধানকালে দেখা যায় ইসরাত জাহানের নামে পূবালী ব্যাংকের ধোলাইপাড় শাখা ও হোটেল ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল শাখার হিসাবে বিভিন্ন সময় স্বামী মজিবুর রহমানের কর্মস্থল থেকে নিয়মিত লেনদেন হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় সাব-রেজিস্ট্রার মজিবর অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ স্ত্রীর আয়কর নথিতে দেখিয়ে বৈধ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে এসব অর্থ অর্জিত বলে মনে করে দুদক। তদন্তে আরও সম্পদের তথ্য পাওয়া যেতে পারে।’

এ বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মজিবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে ঝালকাঠি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছুটির আবেদন দিয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি। অনুসন্ধানকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের একাধিক তলবি নোটিশেও হাজির হননি তিনি।

ইএ/জেআইএম