ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গ্রামবাসীর খরচে নির্মিত সড়ক দেখিয়ে সরকারি প্রকল্পের টাকা উত্তোলন

জেলা প্রতিনিধি | নড়াইল | প্রকাশিত: ০২:০২ পিএম, ২০ জুন ২০২১

নড়াইলের কালিয়ায় গ্রামবাসীর নিজ খরচে নির্মিত রাস্তার কাজ দেখিয়ে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য পরিচালিত সরকারি প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের অভিযোগে উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজনের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় ১৬ জুন উপজেলার নোয়াগ্রামের আব্দুল্লাহ শেখসহ ছয় জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হুদার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাদী হয়ে প্রকল্প সভাপতির বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করেন।

অভিযুক্তরা হলেন- পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরলু ইসলাম মনি, পিআইসি মো. সেলিম রেজা, প্রকল্প সুপারভাইজার দেবাশিষ বিশ্বাস ও পিআইও শরীফ মো. রুবেল।

অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াগ্রামের খাজা মোল্যার বাড়ি থেকে বিল অভিমুখী একটি গ্রাম্য রাস্তা প্রায় ৩-৪ মাস আগে এলাকাবাসী নিজেদের অর্থে সংস্কার করেন। কিন্তু সরকার পরিচালিত অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে গ্রামবাসীর টাকায় নির্মিত ওই রাস্তা দেখিয়ে কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা তুলে ভাগবাটোয়ারা করেন পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরলু ইসলাম মনি, পিআইসি মো. সেলিম রেজা, প্রকল্প সুপারভাইজার দেবাশিষ বিশ্বাস ও পিআইও শরীফ মো. রুবেল।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী দেবদাশ বিশ্বাসের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের কাজের প্রথম পর্যায়ে ৬৯ হাজার টাকা তাদের দেয়া হয়।

ভুয়া প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এলাকাবাসী।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা ব্যাপী সব ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য চলতি অর্থ বছরে সরকারের বাস্তবায়নাধীন কর্মসৃজন প্রকল্পের ১০-১৫ শতাংশ কাজও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় প্রকল্প কমিটির সভাপতিরা করেননি। দেবদাশ ও নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ না করেই এ সমস্ত টাকা ভাগাভাগি করে নেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, অতিদরিদ্রদের জন্য চলতি অর্থ বছরে সরকারের বাস্তবায়নাধীন কর্মসৃজন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৪৮টি প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়। ওইসব প্রকল্পের অনুকুলে ১ হাজার ২৩৯ জন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। আর প্রকল্প সমূহের অনুকুলে ৯৯ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ৯ জুন পর্যন্ত চলে প্রকল্পের কাজ।

কিন্তু উপজেলার নোয়াগ্রামের গ্রামবাসীর অভিযোগ দায়েরের পর সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ে। তখন তড়িঘড়ি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শরীফ মো. রুবেল প্রকল্প সভাপতি মো. সেলিম মোল্যার প্রথম পর্যায়ে তুলে নেয়া ৬৯ হাজার টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ১৬ জুন বিকালে ইউএনওর কাছে সার্টিফিকেট মামলা করেন।

ওইসব প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত উপসহকারী প্রকৌশলী দেবদাশ বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার অজান্তেই এ ঘটনাটি ঘটেছে। সরকারি টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শরীফ মো. রুবেল বলেন, ‘আমি মাত্র কয়েকদিন নড়াইলের কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলার দায়িত্বে আছি। এখন পর্যন্ত কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করি নাই। তবে আপনি বলার পরে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। সত্যিই যদি এ রকম হয়ে থাকে তাহলে পিআইসি মো. সেলিম রেজাকে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করব।’

ইউএনও মো. নাজমুল হুদা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি করেছি, মামলা হয়েছে। টাকা ফেরত নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

হাফিজুল নিলু/এসজে/এমএস