ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘অলৌকিক কর্মকাণ্ডে’ সাধু বেশে লুটে নেন সবকিছু

জেলা প্রতিনিধি | মানিকগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৩:১৬ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

‘ফুঁ দিলেই কাগজে ধরে আগুন। ডাকলেই চলে আসে গায়েবি প্রসাদ। তার ফুঁতে পথের মাটিও হয় মিষ্টি।’ এমন অলৌকিক সব কর্মকাণ্ড দেখিয়ে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করেন সাধু বাবা ওরফে বাচ্চু প্রধান। এরপর বাড়িতে ঢুকে নানা কৌশলে নিজেকে আধ্যাতিক সাধু-সন্ন্যাসী প্রমাণের চেষ্টা করেন। আর সুযোগ বুঝেই সবাইকে অচেতন করে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে দেন চম্পট।

মানিকগঞ্জ শহরে পঙ্কজ কুমার নামে এক ব্যবসায়ীর পরিবারের ছয় সদস্যকে প্রসাদের কথা বলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে মালামাল নিয়ে পালিয়ে যান ভণ্ড সাধু বাবা। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাকে আদালতে তোলা হয়।

পুলিশ জানায়, শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) তাকে গ্রেফতারের পর ঘটনা তদন্তে বাচ্চু প্রধানকে শহরের আন্ধারমানিক এলাকায় পঙ্কজ কুমার মণ্ডলের বাড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। বাচ্চু প্রধান সবার সামনে দেখান কীভাবে কেমিক্যাল মিশিয়ে কাগজে আগুন ধরিয়ে দেন এবং মাটিকে মিষ্টি বানান।

প্রতারক সাধু বাবাকে দেখতে ভিড় করে আশপাশের কয়েকশ নারী-পুরুষ। এ সময় মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী পঙ্কজ কুমার মণ্ডল জানান, ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে সাধু বাবাকে বসে থাকতে দেখে সামনে এগিয়ে যান তিনি। সাধুর পরনে শুধু একটি গামছা ছিল। কাদা মাখানো থাকলেও শরীর দিয়ে সুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। এ সময় সাধু হাতে মাটি তুলে তাকে খেতে বলেন। মুখে দিয়ে পঙ্কজ দেখেন মাটি মিষ্টি লাগছে। তার সঙ্গে কথা বলে কোনো আধ্যাত্মিক মানুষ মনে হয়। এ কারণে পঙ্কজ তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যান।

jagonews24

পঙ্কজ কুমার আরও জানান, আশ্রম থেকে এসেছেন বলে জানান সাধু। এ সময় ফুঁ দিয়ে একটি কাগজে আগুন ধরিয়ে দেখান। ঘরের বাতি বন্ধ করে আয় আয় বলে ডেকে গায়েবি প্রসাদ আনেন। সাধুর এত সব অলৌকিক কারবার দেখে পঙ্কজের পরিবার তার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দেন। ৫ সেপ্টেম্বর রাতে সাধু বিভিন্ন পূজার্চনা করে পরিবারের সবার রোগমুক্তির জন্য ‘মহাপ্রসাদ’ দেওয়ার কথা জানান।

ওইদিনও ঘরের বাতি বন্ধ করে তিনি আয় আয় বলে ডেকে গায়েবি প্রসাদ আনেন। বাড়ির ছয় সদস্যকেই সেই প্রসাদ খাওয়ানো হয়। এরপরই সবাই অচেতন হয়ে পড়লে বাড়ির তিনটি ঘর থেকে স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন লুটে নিয়ে পালিয়ে যান ভণ্ড সাধু বাবা।

তিনি জানান, স্থানীয় কাউন্সিলর ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় অসুস্থদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাদের জ্ঞান ফেরার পর ঘটনা জানতে পারেন। এ ঘটনায় পঙ্কজ কুমার মানিকগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা জানান, ঘটনা জানার পর ওই প্রতারক সাধু বাবাকে ধরতে মাঠে নামেন তারা। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাচ্চু প্রধান চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে কীভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেন তাও সবার সামনে বলেছেন। এ ঘটনা তিনি মানিকগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটিয়েছেন।

বি.এম খোরশেদ/এসজে/জেআইএম