এবারও নিরাশ হয়ে ফিরলেন দু’পারের স্বজনরা
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার কুলিক নদীর পাড়ে ঐতিহ্যবাহী পাথরকালি মেলা উপলক্ষে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে যুগ যুগ ধরে দুই বাংলার হাজারো মানুষ স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসছেন। মেলা কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ভিড় জমান হাজারো মানুষ। কিন্তু এবারও নিরাশ হয়েই ফিরে গেছেন দুদেশের স্বজনরা।
শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) নিয়ম অনুযায়ী হরিপুরের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৬নং ভাতুড়িয়া ইউনিয়নের মাকড়হাট ক্যাম্পের ৩৪৬ পিলার সংলগ্ন টেংরিয়া গোবিন্দপুর গ্রামে হওয়ার কথা ছিল এই মিলনমেলা। সেই মোতাবেক বাঙালি আত্মীয় স্বজনরা প্রিয় স্বজনদের জন্য জিনিসপত্র নিয়ে কাঁটাতারের পাশে অবস্থান করলেও ভিড়তে পারেননি কাঁটাতারের পাশে।
জানা যায়, ডিসেম্বর মাসের প্রথম শুক্রবার লাখো মানুষের সমাগমে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ-ভারত মিলনমেলা হয়ে থাকে। এর আগের বছর করোনার সংক্রমণের কারণে মিলনমেলার আয়োজন করা হয়নি। এবারো একই কারণে মেলা আয়োজন করেনি কর্তৃপক্ষ। এতে কাঁটাতারের ওপারে থাকা আত্মীয়স্বজনরা মিলিত হতে পারনেনি।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের (ওমিক্রণ) কারণে এবার সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে কোনো মানুষকে ভিড় জমাতে দেয়নি ভারতীয় ও বাংলাদেশি সীমান্ত রক্ষী বাহিনী।

কয়েক যুগ ধরেই এখানে পাথরকালি মেলার আয়োজন করছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। কালীপুজার পর ওই এলাকায় বসে এই পাথরকালি মেলা। মেলাকে ঘিরে একদিনের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দুই বাংলার মানুষ আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। সঙ্গে আনা জিনিসপত্র কাঁটাতারের ওপর দিয়ে ছুড়ে দেন স্বজনদের উদ্দেশ্যে।
স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে আশা জব্বার জানান, বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বসবাস করছেন নিজস্ব আত্নীয় স্বজন। দেখা করার, গল্প করার ও একজন আরেকজনের বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে হলেও কোনো উপায় নেই। কারণ মাঝখানে আছে কাঁটাতারের বেড়া। প্রতিবছরে একটি পূজাকে কেন্দ্র করে কাঁটাতার ধরে দু’দেশের স্বজনদের দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এবার সেটাও হলো না।
নিজের ভাইকে দেখতে আসা আলী আকবর বলেন, আপনজনদের দেখার জন্য এক বছর অপেক্ষা করে থাকি। নিজের ভাই থাকে পরিবারসহ ওপারে। গতবছরও দেখা করতে পারিনি। এবারে আশা ছিল ভাইয়ের মুখ দেখতে পারব কিন্তু ভারতের প্রসাশন তা হতে দিলো না।
মেয়ের জন্য পিঠা নিয়ে আসা বৃদ্ধা সালেহা বেগম বলেন, এখন এই পিঠা কে খাবে? মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনির জন্য নিজের হাতে পিঠা বানিয়ে নিয়ে আসছি। কিন্তু পিঠা দেওয়া দূরের কথা, এক পলক দেখা করতেও পারলাম না।
পূজা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নগেন কুমার পাল বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে মিলনমেলা করা সম্ভব হয়নি। শুধু পূ্জা পালন করা হয়েছে।
হরিপুরের গোবিন্দপুর ও চাপাসার ক্যাম্পে কর্মরত সীমান্ত বাহিনীর সদস্যরা জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে এবার মিলনমেলা বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। কাঁটাতারের কাছে কোনো বাংলাদেশি যেন না যায় সে বিষয়ে আমাদের অনুরোধ করেছে।
তানভীর হাসান তানু/এফএ/এমএস