স্বামীর পর সন্তান হারিয়ে কান্না থামছে না মনিরা আক্তারের
সন্তানের কফিন দেখছেন মা মনিরা আক্তার। ইনসেটে নিহত মাহমুদ হাবিব হিমেল
জানাজা শেষে বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাদ জোহর নানাবাড়ি নাটোর শহরের গাড়িখানা কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন ট্রাকচাপায় নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল।
এর আগে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে নাটোর শহরের কাপুড়িয়াপট্টি নানাবাড়ি এলাকায় পৌঁছে হিমেলের মরদেহ। এসময় মরদেহের সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
সেখানে পৌঁছানোর পর মরদেহ নেওয়া হয় নানাবাড়ির বাড়ির পাশের নব বিধান বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। এসময় নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাদিম সারায়ার, পৌরমেয়র উমা চৌধুরীসহ বিভিন্ন স্তরের অসংখ্য মানুষ। পরে জানাজা শেষে দাফন করা হয় হিমেলের মরদেহ।

মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ক্যাম্পাসের ভেতরেই ট্রাকচাপায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল।
তিনি শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ড্রামা অ্যাসোসিয়েশনের (রুডা) সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের দফতর সম্পাদক ছিলেন হিমেল।

বুধবার হিমেলের নানা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) খন্দকার মনির হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হিমেলের মৃত্যুর পর থেকে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার মায়ের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। পরিবারের সদস্যরা কান্নাকাটি করছেন। তার মা মনিরা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
হিমেলের বড় মামা খন্দকার আরিফুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালে মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার পথে নিহত হন হিমেলের বাবা আহসান হাবিব। এসময় হিমেলের মা মনিরা আক্তার আহত হন। এরপর থেকেই তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিলেন।

এ ঘটনার পর থেকেই হিমেল ও তার মা নাটোরে নানাবাড়িতেই বসসবাস করছিলেন। নাটোর এনএস সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন হিমেল।
এদিকে নিহত হিমেলের মা ও নানার সঙ্গে দেখা করে তাদের সান্ত্বনা দেন রাবি উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি দল। এসময় হিমেলের মা মনিরা আক্তারের হাতে পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেন উপাচার্য। একই সঙ্গে তিনি সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। উপাচার্য বলেন, ‘এটি একটি টোকেন মানি। আমরা চেষ্টা করবো হিমেলের পরিবার যাতে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে।’
রেজাউল করিম রেজা/এসআর/এএসএম