পা দিয়ে লিখেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে হোসেন
দুর্ঘটনায় দুই হাত হারিয়ে পা দিয়ে লিখে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে মো. হোসেন
সাত বছর আগে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় দুই হাত হারায় মো. হোসেন। তখন সে প্রথম শ্রেণির ছাত্র। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ দেখে বাবা-মা তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেননি। দুই হাত না থাকায় পা দিয়েই লেখা আয়ত্ত করেছে হোসেন।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চার্চ কলোনির বাসিন্দা কৃষক সাহাবুদ্দিনের ছেলে মো. হোসেন। সে উত্তর চরমানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।
হোসেনের বাবা সাহাবুদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট হোসেন। ২০১৫ সালে বাড়ির পাশের একটি দোতলা নির্মাণাধীন ভবনে উঠে খেলাধুলা করার সময় বৈদ্যুতিক খুঁটিতে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হয়। তাকে স্থানীয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শে হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু হোসেনের দুই হাত রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘হোসেনের চিকিৎসার জন্য জমিজমা বিক্রি করেছি। আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয়দের কাছ থেকে ধারদেনা করে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এতে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই হাত হারানোর পরও হোসেন পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক আগ্রহী ছিল। তাই আমরা তার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে।’

মো. হোসেন জাগো নিউজকে বলে, ‘সবাই বলতো তুই মুখ দিয়ে পড়তে পারলেও লিখবি ক্যামনে? তারপর আমি পা দিয়ে লেখা শুরু করলাম। পা দিয়ে লিখেই পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছি। বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছি।’
সে আরও বলে, ‘আমাকে পড়াশোনা করাতে বাবা-মা অনেক সহযোগিতা করছে। পড়াশোনা শেষে বড় চাকরি করে বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই। তবে কৃত্রিম হাত পেলে আমার কষ্ট অনেক কম হতো।’
উত্তর চরমানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন জানান, হোসেন একজন মেধাবী ছাত্র। হাত না থাকায় সে পা দিয়ে লেখে। তার লেখা অনেক সুন্দর। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হোসেনের পড়াশোনার বিষয়ে খেয়াল রাখছেন।
এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান জাগো নিউজকে বলেন, হোসেনের পরিবার থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। তার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। তার পড়াশোনাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এসআর/জিকেএস