হাওরের উৎকণ্ঠার ধান ঘরে উঠলো অবশেষে
চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে শেষ হলো সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো ধান কাটা। ধান ঘরে তুলতে পেরে খুশি কৃষক। এর আগে কষ্টের ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি না ভেবে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তারা।
কৃষকদের দুশ্চিন্তা বেড়ে যায় যখন উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় হাওরের ফসল। একে একে বিভিন্ন উপজেলার হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যেতে থাকে সোনালী ফসল। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোতে ফাটল দেখা যায়। বাঁধগুলো রক্ষায় দিনরাত স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন হাওরের কৃষকরা। ফসল তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে কাটতে থাকেন আধাপাকা ধান। সেই আধাপাকা ধান ঘরে তুলতে পেরে খুশি কৃষকরা। কাটা ধান শুকিয়ে এখন বস্তায় ভরতে ব্যস্ত শিশু থেকে শুরু করেন কিষান-কিষানিরা।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের কৃষক হাকিম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাওরের ধান ঘরে তুলতে পেরে সত্যি খুব আনন্দ লাগছে। যাই তুলতে পেরেছি ছেলেমেয়েকে নিয়ে শান্তিতে চলতে পারবো।’
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার করচার হাওরের কৃষক আব্দুল হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেভাবে হাওরের বাঁধ ভাঙতে শুরু হয়েছিল তখন ভেবেছিলাম একমুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারবো না। শেষ পর্যন্ত ধান ঘরে তুলতে পেরে আনন্দ লাগছে।'

করচার হাওরের আরেক কৃষক সুহেল মিয়া বলেন, ‘হাওরের বাঁধে যখন ফাটল দেখা দেয় তখন থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আধাপাকা ধান কাটতে শুরু করি। কারণ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার চেয়ে কাটাই অনেক ভালো।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ১৩৭টি ছোট-বড় হাওরে দুই লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের চাষাবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ২০টি ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় পাঁচ হাজার ৭৬৫ হেক্টর বোরো ধান। ধান আনুমানিক মূল্য ৭০ কোটি টাকা। তবে এরই মধ্যে হাওরের ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, অনেক কষ্টের পর কৃষকরা হাওরের ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে যে ২০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, হাওরে ধান কাটা শেষ হয়েছে। নন হাওরের উঁচু জায়গায় কিছু জমি রয়েছে সেগুলোতে ধান কাটা বাকি রয়েছে।
লিপসন আহমেদ/এসআর/জিকেএস