ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আবাসিক এলাকায় ময়লার ভাগাড়, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে এলাকাবাসী

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) | প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ৩০ মে ২০২২

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের তারাব পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে আবাসিক এলাকায় মসজিদের খালি জায়গায়। এতে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়া মশা-মাছির উপদ্রব বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

জানা গেছে, উপজেলার তারাব পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মাসাব গ্রামের আবাসিক এলাকায় পৌরসভার সব ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এখানে গৃহস্থালির বর্জ্য থেকে শুরু করে হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্য ফেলা হয়। ময়লাবাহী ট্রাকগুলো প্রতিদিন যখন একের পর এক আসা পাওয়া করে তখন এলাকার বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া ট্রাকগুলো থেকে ময়লা বহনের সময় তা রাস্তায় পড়ে পরিবেশ দূষণ ও দুর্গন্ধ ছড়ায়।

Rupganj-1.jpg

এদিকে, জনবহুল এলাকায় অবাধে ময়লা ফেলার কারণে আশপাশের বাসিন্দারা পড়েছেন বিপাকে। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ বাতাসে মিশে পরিবেশ নষ্ট করছে। এর ফলে রোগ-ব্যাধিও বাড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাসাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নামে (ক, তফসিলের) লিজ নেওয়া ৬০ শতাংশ জমিতে বছরখানেক আগে ময়লা ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। সে জমিতে ৫/৬ মাস আগে ময়লা ফেলা শুরু শুরু হয়। কিছুদিন ময়লা ফেলার পর দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ মিছিল ও আন্দোলন শুরু করে। তখন পৌরসভার লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গত রমজানের আগে ময়লা ফেলা বন্ধ করে। কিন্তু ঈদের সপ্তাহখানেক পর থেকে ফের ময়লা ফেলা শুরু করে পৗর কর্তৃপক্ষ। এ ময়লা-আবর্জনার উৎকট দুর্গন্ধে আশপাশের শতশত পরিবারের সেখানে টেকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে ওই পথে যাতায়াতকারী স্কুল শিক্ষার্থীরাসহ পথচারীরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর দাবি, যে করেই হোক এই ময়লার ভাগাড় যেন অবিলম্বে আবাসিক এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়।

Rupganj-1.jpg

স্থানীয় বাসিন্দা ও মাসাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা জহিরুল সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, বিগত সময়ে পৌরসভা কর্তৃক ওই জমিতে ময়লা ফেলার আলোচনায় আমি বরাবরই বিরোধিতা করে আসছি। সব মতামত উপেক্ষা করে ময়লা ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আজ এ জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। আবাসিক এলাকার জনদুর্ভোগ এড়াতে এ ময়লার ভাগাড় সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

ভাগাড়-সংলগ্ন বাসিন্দা গৃহবধূ রাহেলা বেগম বলেন, তার স্বামী পেশায় গার্মেন্টস শ্রমিক। চার বছরের মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে গত এক বছর ধরে ভাগাড়ের পাশে ভাড়া বাসায় থাকেন। ভাগাড় থেকে সবসময় তীব্র দুর্গন্ধ আসে। গন্ধে বাচ্চার প্রায় পেটের সমস্যা, সর্দি ও কাশি হয়। বৃষ্টির পর যখন রোদ ওঠে তখন গন্ধ আরও তীব্র হয়। ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ রাখতে হয়।

মাসাব এলাকার বাসিন্দা আউয়াল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মাসাব আবাসিক এলাকায় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ময়লা ফেলা শুরু করলে কিছুদিন পর স্থানীয় জনগণ বাঁধ সাধে। এতে রোজার মাসে ময়লা ফেলা বন্ধ থাকে। পরে পৌরসভার একটি প্রতিনিধি দল স্পটে এসে উপস্থিত ২/৪ জনের সঙ্গে কথা বলে আবার ময়লা ফেলা শুরু করে। তিনিও এ ময়লার ভাগাড় সরিয়ে নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

Rupganj-1.jpg

তারাব পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসেল শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, আবাসিক এলাকায় মাসাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের জায়গায় ময়লার ভাগাড় করার প্রশ্নে তখনো আমি বিরোধিতা করেছিলাম। এখন এলাকাবাসীর দুর্দশা দেখে আমি মর্মাহত। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। অন্যত্র জায়গা ব্যবস্থা করে দ্রুত ময়লা ফেলা বন্ধ করার কাজ চলছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে গত মঙ্গলবার (২৪ মে) তারাব পৌর মেয়র হাসিনা গাজীর অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে সোমবার (৩০ মে) মেয়রের মুঠোফোনে কল করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে এক নারী ফোন রিসিভ করেন। তিনি জানান, মেয়র বিশ্রামে আছেন তাই কথা বলতে পারবেন না। তবে কখন ফোন করলে মেয়রকে পাওয়া যাবে সে বিষয়টি জানতে চাইলেও কোনো সময় দেননি মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী।

এ বিষয়ে তারাব পৌরসভার সচিব তাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তবে তারাব পৌরসভার বর্জ্য পরিদর্শক ফিরোজ আলম জাগো নিউজকে বলেন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর আসমা পারভীনের প্রস্তাবে পৌর কর্তৃপক্ষ জমি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ময়লা ডাম্পিং শুরু করে। পরবর্তীকালে এলাকাবাসী বাধা দিলে কাউন্সিলর জাকারিয়া মোল্লা, মনির হোসেন, লায়লা পারভীনসহ একটি প্রতিনিধি দল ময়লা ফেলার জায়গাটি পরিদর্শন করেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে কিছুদিনের সময় নিয়ে পুনরায় ময়লা ফেলা আরম্ভ করি। এখন ময়লা যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় সেজন্য ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করছি। এছাড়া বোল্ট ড্রেজার দিয়ে ময়লা সঙ্গে সঙ্গে পানিতে মিশিয়ে দিচ্ছি।

এমআরআর/এমএস