ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সুনামগঞ্জে বাসভাসিদের ঘরে নেই ঈদ আনন্দ

জেলা প্রতিনিধি | সুনামগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৬:৩৫ পিএম, ১০ জুলাই ২০২২

গ্রামের নাম রাজারগাও। তবে এই গ্রামে কোনো রাজা কিংবা বাদশা বসবাস করেন না। তিন শতাধিক পরিবারের এই গ্রামের কেউ কৃষি কাজ করেন, কেউবা জুতা সেলাইয়ের কাজ আবার কেউ দিনমজুর। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নে অবস্থিত এই রাজাগাও। সাম্প্রতিক বন্যায় ভেসে গেছে এই গ্রামের মানুষের ঘরবাড়ি।

এই গ্রামের বাসিন্দা রাজা মিয়া। পেশায় একজন দিনমজুর। তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছোট একটি কুঁড়েঘরে বসবাস করছিলেন। কিন্তু বন্যা তার কুঁড়েঘরটি দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে। এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকছেন তিনি। বন্যায় ভেসে গেছে পরিবারটির ঈদের আনন্দ।

রাজা মিয়া বলেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বায়না ধরেছিল ঈদে নতুন জামা কিনবে। কিন্তু আমি এমন এক হতভাগা বাবা টাকার অভাবে তাদের নতুন জামা কিনে দিতে পারিনি।

jagonews24

শুধু রাজা মিয়া নন, বন্যার কারণে সুনামগঞ্জ জেলাজুড়েই ঈদের আনন্দে ভাটা পড়েছে।

এদিকে, গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা নতুন পোশাকের বদলে ছেড়া পোশাক পরে আছে। অনেকে আবার খালি গায়ে বসে খেলাধুলা করছে। দেখে মনে হবে ঈদের থেকে এখন বেঁচে থাকার লড়াইটাই যেন তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ ঈদুল আজহা উদযাপন হলেও নানা সংকটে আছেন সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের বানভাসি কয়েক লাখ মানুষ। এবারের ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত তারা। ঈদের আনন্দ, উল্লাস নেই অনেক পরিবারে। বন্যায় জেলার ১১টি উপজেলার ৮৮ ইউনিয়নের ২ হাজার ৮৮৮টি গ্রামের প্রতিটিতেই শতশত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

jagonews24

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৩০ লাখ মানুষ ও ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩৪টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৫ হাজার ২৮৮টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো হাজারো পরিবার পানিবন্দি আছে। ৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাত হাজার মানুষ অবস্থান করছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের চাল, নগদসহ ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যাদের ঘরবাড়ি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ৫ হাজার পরিবারকে নগদ ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।

ঘরবাড়ি হারা অনেকেই জানিয়েছেন, বন্যার পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি বানভাসি মানুষদের। অনেকেই এখনো নিজের বাড়িঘরে ফিরতে পারেননি। অনেকের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। যারা গত বছরের ঈদে পশু কোরবানি দিয়েছেন বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে এবারের ঈদে তারা অন্যের বাড়িঘরে আশ্রিত হিসেবে আছেন। ঈদের আনন্দ উদযাপনের চেয়ে বেঁচে থাকা ও ঘুরে দাঁড়ানোই তাদের বড় বিষয়। ঈদ উদযাপনের কোনো প্রস্তুতি নেই তাদের। বেঁচে থাকলে আগামী ঈদে পশু কোরবানি দেবেন তারা।

সদর উপজেলার অচিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা সালেমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ঘরে চাল, ডাল তেল কিছুই নেই। এমনকী ঘরের চারদিকে ভাঙা। সেই ঘরেই ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকতে হচ্ছে। এই বছর ঈদ শব্দটা আমাদের জন্য বাড়তি কষ্ট নিয়ে এসেছে।

jagonews24

রাজাগাও গ্রামের আরেক বাসিন্দা হায়দার মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ছেলেমেয়ে বায়না করেছিল কাপড় কিনে দেওয়ার জন্য কিন্তু পকেটে ছেলেমেয়েকে খাওয়ানোর টাকা নেই। কাপড় কোথায় থেকে কিনে দেবে। তাই ছেলেমেয়েকে বুঝ দিয়েছি বেঁচে থাকলে আগামী বছর নতুন কাপড় কিনে দেবো।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে তাদের বাড়িঘর মেরামতের। ঈদের আগেই যেন তারা বাড়িঘরে বসবাস করতে পারেন। এজন্য তিনি পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সেই টাকা পাঁচ হাজার পরিবারের মাঝে ১০ হাজার করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুই হাজার বান্ডিল ঢেউটিন ও ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঈদের সময় যাতে খাদ্যকষ্ট না হয় সেজন্য ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে ১০ কেজি করে ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ১ হাজার ৩৫৬ টন জিআর চাল ও ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও ৫৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে আরও মানুষ ঢেউটিন ও নগদ টাকা পাবে।

লিপসন আহমেদ/এমআরআর/এএসএম