ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জয়পুরহাটে খাসির চামড়া ৫ টাকা

জেলা প্রতিনিধি | জয়পুরহাট | প্রকাশিত: ০১:০৭ পিএম, ১১ জুলাই ২০২২

কোরবানি পশুর চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে জয়পুরহাটে। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জেলার বাজারগুলোতে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে বিগত বছরগুলোর চেয়ে চার ভাগের এক ভাগ দামে। দাম কম হওয়ায় অনেক জায়গায় মাটিতে পড়ে আছে চামড়া।

চামড়ার বাজারের ধসের শিকার মধ্যস্বত্বভোগী ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেকটাই দিশেহারা। প্রতিবছর যেসব হতদরিদ্র মানুষ কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা থেকে একটা অংশ পেয়ে থাকে, এবার তাদের ভাগ্যেও জুটবে না। যেখানে একটি পানের খিলির দাম ৫ টাকা সেখানে একটা খাসির চামড়াও বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকায়।

পুঁজি সংকট, ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনার কারণে চামড়ার দাম পড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বিগত বছরগুলোতে জেলায় বিভিন্ন বাজারে যেখানে প্রতিটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। এবার সেখানে আকার ভেদে প্রতি ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকায়। আর প্রতিটি গরুর চামড়া যেখানে বিক্রি হয়েছিল ৮০০ থেকে হাজার টাকারও বেশি, এ বছর সেখানে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০০ থেকে ৪০০ টাকায়। চামড়ার বাজার ধসের কারণে লোকসানের শিকার হচ্ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার তেঘর গ্রামের বাবু মিয়া, কালাই উপজেলার মোলামগাড়ী গ্রামের আফজাল হোসেন, ক্ষেতলাল উপজেলার দাশড়া গ্রামের হানিফ হোসেন ও পাঁচবিবি উপজেলার ফিসকাঘাট গ্রামের আহসান হাবিবসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার কোরবানিদাতারা জানান, হতদরিদ্র মানুষ কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা থেকে একটা অংশ পেয়ে থাকে প্রতিবছর। এবার তাদের ভাগ্যেও জুটবে না। বিগত কয়েক বছর থেকে চামড়ার এমন মন্দা বাজার তারা দেখেননি। চামড়ার যে কোনো একটি পণ্যের দাম ৫০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। সেখানে চামড়ার দাম কম। এ শিল্পের দিকে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

জয়পুরহাট পৌর শহরের শান্তিনগর এলাকার বাবুলুর রহমান সেলিম, প্রামাণিকপাড়ার শহিদুল ইসলাম ও জামালগঞ্জ বাজারের মতিউর রহমানসহ মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির চামড়ার দরপতনে দিশেহারা তারা। প্রতি বছর কোরবানির সময় দু-এক দিনের এ ব্যবসায় টাকা খাটিয়ে ভালো লাভ করেন। তবে এবারের দরপতনে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে বিপাকে তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক ফড়িয়া জানান, সীমান্তে কড়াকড়ি না থাকলে তারা ওপারে চামড়া পাঠিয়ে কিছু লাভের মুখ দেখতেন। এবার সেটিও হচ্ছে না।

জয়পুরহাট শহরের চামড়া ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন, সরদার নবাব বলেন, ‘ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা রয়েছে লাখ লাখ টাকা। হাতে টাকা না থাকায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে চামড়া কিনতে পারছি না। ফলে বাজারে চাহিদা কম থাকায় চামড়া মূল্য কমে গেছে।’

অন্যদিকে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। এতে দেশের স্থানীয় বাজারে আপাতত চামড়া কেনাবেচা করতে হচ্ছে। ফলে চাহিদা খানিকটা কম হওয়ায় দরপতন ঘটছে বলে দাবি কয়েকজন ব্যবসায়ীর।

জয়পুরহাট চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতা অহেদুল হোসেন ছোটন জাগো নিউজকে বলেন, ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে একদিকে গত বছরগুলোর বকেয়া টাকা দিতে নানা তালবাহানা করছেন। অন্যদিকে সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দেয় সে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ট্যানারি মালিকরা তাদের ইচ্ছে মতো দাম বেঁধে দেন। এতে পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, বাপ-দাদারা এ ব্যবসা করে গেছেন। এখন আমরা করছি। এ ব্যবসা রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। ছেড়ে দিতে চাইলেও পারি না।

জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের অধীনে সীমান্ত এলাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা তারকাঁটায় ঘেরা, বাকি ১৮ কিলোমিটার সীমান্তে তারকাঁটা নেই। চোরাকারবারিরা মূলত এ জায়গাটিকেই পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই এ জায়গাগুলো সব সময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে এবং অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এবার সীমান্ত দিয়ে একটি গরুও আসতে দেওয়া হয়নি। তেমনি কোরবানি পশুর চামড়া ভারতে যেন না পাচার হয় সেই চেষ্টা অব্যাহত আছে। এজন্য ব্যাটালিয়নের অধীন ১২০টি পোস্ট ও ক্যাম্পে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

রাশেদুজ্জামান/এসজে/জেআইএম