আড়াই বছর ধরে দর্শনা দিয়ে ভারত যেতে পারছেন না যাত্রীরা
দর্শনা চেকপোস্টে শুনসান নীরবতা
করোনায় বন্ধ থাকার পর সড়ক পথে ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হলেও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে প্রায় আড়াইবছর ধরে ভারত যেতে পারছেন না পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে। বাধ্য হয়ে অনেকটা পথ ঘুরে যশোরের বেনাপোল দিয়ে ভারতে যেতে হচ্ছে। এতে সময় অপচয় এবং বেড়েছে খরচ। এছাড়া রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা মহামারির আগে এ পথে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার যাত্রী ভারতে যাতায়াত করতেন। এখন সেখানে ব্যবসায়িক ভিসায় ভারতীয় নাগরিকসহ বাংলাদেশি ৫০-৬০ জন যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। এ কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এর ওপর নির্ভরশীল কয়েক হাজার মানুষ। তাদের অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন। আবার অনেকে আছেন চেকপোস্ট খোলার আশায়। আড়াই বছর ধরে চেকপোস্টটি বন্ধ থাকায় প্রভাব পড়েছে রাজস্ব খাতের ওপরও। গত আড়াই বছরে সরকারের প্রায় ৫০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
দর্শনা ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ বন্ধ হয়ে যায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্টের কার্যক্রম। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুধুমাত্র মেডিকেল ও বিজনেস ভিসায় দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত করার অনুমতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে ৫ ডিসেম্বর তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই থেকে এখনো দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাতায়াতের জন্য কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।
ঝিনাইদহ জেলার গোয়ালহুদা গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহীসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষ দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে না যেতে পেরে বাধ্য হয়ে যশোরের বেনাপোল দিয়ে যাচ্ছেন। এতে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। এছাড়া যাতায়াত খরচও তিনগুণ বেশি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে দর্শনা চেকপোস্টে আসতে খরচ হয় মাত্র ১০০ টাকা। অপরদিকে যশোরের বেনাপোল পৌঁছাতে খরচ হয় ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা।’
চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট ঠিকাদার খুসতার জামিল বলেন, ‘দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করতে না পেরে বাধ্য হয়ে বেনাপোল দিয়ে ভারত যেতে হচ্ছে। এতে সাত-আট ঘণ্টা সময় ধরে চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।’
দর্শনা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ভিসা চালু করা হলে সরকার আগের মতো কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। একই সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর যাত্রীর চাপ কমবে।
দর্শনা ইমিগ্রেশন ইনচার্জ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবু নাঈম জাগো নিউজকে বলেন, ভারতীয় নাগরিকরা যে কোনো ভিসায় দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছেন। তবে বাংলাদেশিদের এ পথে নতুন করে কোনো ভিসা দেওয়া হচ্ছে না।’
দর্শনা কাস্টমস সুপারিনটেনডেন্ট শুভাশীষ কুন্ডু জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোভিডের আগে এ পথে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজারের ওপরে পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে যাতায়াত করেছে। ভিসা চালু হলে আগের মতো পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
সালাউদ্দীন কাজল/এসজে/জিকেএস