নির্বাচন রংপুরে, প্রচারণা নীলফামারীতে
সৈয়দপুর পৌরসভায় ঝুলানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন
রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হতে বাকি আর চার-পাঁচ মাস। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনের ক্ষণগণনা। তবে নির্বাচন রংপুরে হলেও সেই হাওয়া লেগেছে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পৌরসভায়। পুরো শহরের রাস্তাঘাট ছেয়ে গেছে তুষার কান্তি রায় নামের এক আওয়ামী লীগ নেতার মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যানার ও ফেস্টুনে।
এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া থাকলেও সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ওই আওয়ামী লীগ নেতার দাবি, নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতেই এমন প্রচারণা। এদিকে দ্রুত ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছে সৈয়দপুর পৌর কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তুষার কান্তি রায় রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং রংপুর কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের বাস টার্মিনাল, বিমানবন্দর ও সেনানিবাস সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নৌকা প্রতীকে মেয়র পদ প্রত্যাশী তুষার কান্তি রায়ের ব্যানার ও ফেস্টুন ঝুলছে। এসব ব্যানার ও ফেস্টুন বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছ, রোড ডিভাইডার ও দেওয়ালে যত্রতত্রভাবে লাগানো হয়েছে।
সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল এলাকার সামসুল হক ও রমিজ আলী দুই রিকশা চালক। দুজনে কথা বলছিলেন তুষার কান্তি রায়ের ব্যানার নিয়ে। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তারা বলেন, ‘কে এই লোক আমরা জানি না চিনি না। আমাদের তো মেয়র আছে, তাহলে কে এই নতুন মেয়র? উনি তো সৈয়দপুরের কেউ না আর এখানে তো তার কোনো ভোটও নাই।’
একই প্রশ্ন অটোরিকশাচালক মনছুর আলীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের তো একটাই মেয়র ,উনি কোন মেয়র। উনি কই থেকে এসে সবার থেকে দোয়া চাচ্ছেন, পোস্টার ছাপাচ্ছেন।’

ভ্যানচালক শহিদুল বলেন, ‘আমাদের এখানে একজন মেয়র আছে। আবার রংপুরের মেয়র এখানে এসে কীভাবে দোয়া চায়? এটাতে তো আমরা বিপাকে পড়ছি।’
পৌর শহরের বাসিন্দা সারোয়ার আলম বলেন, ‘এসব বিভ্রান্তিতে কেন তিনি আমাদের ফেলছেন। রংপুর শহর থেকে সৈয়দপুর ৪০ কিলোমিটার দূরে। এখানে কেন তিনি দোয়া চাইবেন। দ্রুত এগুলো অপসারণ করতে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
এ বিষয়ে মেয়র পদ প্রত্যাশী রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টিতে এটা করা হয়েছে। শুধু সৈয়দপুর কেন নেত্রীর প্রচারে, নৌকার প্রচারে সারাদেশে এ ব্যানার ফেস্টুন লাগানো হবে। দেশের বিভাগ কয়টা, কোন বিভাগে সিটি করপোরেশন আছে, এটা তো প্রচার করতে হবে তাই না। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। শুধু সৈয়দপুর শহর না প্রতিটা গ্রামে প্রচারণা করবো। আমি তো নেত্রী ও নৌকার প্রচার করছি।’

সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, আসলে বিষয়টি আমি জানি না, উনি কেন এটা করলো আমার বোধগম্য নয়। এটা তো রংপুর সিটি করপোরেশনের ব্যাপার। ওই রাস্তা দিয়ে হয়তো মন্ত্রীরা যাতায়াত করেন, এ কারণে ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছেন। তবে রংপুরের ভোট রংপুরে লাগাবে, সৈয়দপুরে লাগাবে কেন?’
সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আক্তার জাহান জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার সভা হয়েছে। আমরা এসব অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
রংপুর সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর। নির্বাচিত সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। যেহেতু কোনো সিটির মেয়াদ ধরা হয় প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর, তাই এ সিটিতে নির্বাচিতদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
এসজে/এএসএম