অভিভাবকহীন বিদ্যালয়, দুমাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষক-কর্মচারীরা
প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুর পর পঞ্চগড় বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত কিংবা নতুন কোনো নিয়োগ হয়নি। অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টি। ফলে দু মাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না শিক্ষক ও কর্মচারীরা। একইসঙ্গে ধারদেনায় চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী, ৪৫ জন শিক্ষক এবং আট জন কর্মচারী রয়েছেন। ৩০ জুলাই প্রধান শিক্ষক মো. মোফাজ্জল হোসেন আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর থেকে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে বিদ্যালয়টি।
শিক্ষকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে শিক্ষক জোবায়ের ইসলাম বাদল নিজ উদ্যোগে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পাশের চেয়ারে বসে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুর পরদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেতে ২২ আগস্ট রংপুর বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে কাগজপত্র পাঠান। তার চেয়ে তিন দিনের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. ছায়ফুল্লাহ কাছ থেকে তিনি একটি অনাপত্তিপত্রও নেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদটি অনুমোদন না হওয়ায় আর্থিক সংকটসহ নানা জটিলতায় পড়ে বিদ্যালয়টি।
বিদ্যালয়ের আনুষঙ্গিক খরচসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর করার কেউ না থাকায় এ অর্থ সংকট শুরু হয়। গত জুলাই এবং আগস্ট মাসের বেতনও পাননি শিক্ষক-কর্মচারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সিনিয়র শিক্ষক মো. ছায়ফুল্লাহ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার কথা। তার বিষয়টি এতদিনে উপ-পরিচালক কার্যালয় থেকে অনুমোদন হয়ে আসতো। কিন্তু দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. জোবায়ের ইসলাম বাদল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হতে নানাভাবে চেষ্টা তদবির করায় অভিভাবকহীন হয়ে আছে বিদ্যালয়টি। ১৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শুরু। তাই এখানে দ্রুত একজন সরাসরি প্রধান শিক্ষক প্রয়োজন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক না থাকায় জেলার অন্যতম সরকারি এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এ জন্য আমরাও দুই মাস হলো বেতন পাই না। ধারদেনা করেই চলতে হচ্ছে। স্কুলও ধারদেনা করেই চলছে। কে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হবেন, এ নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই। তবে আমরা চাই এখানে দ্রুত একজন প্রধান শিক্ষক পদায়ন করা হোক।’
বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. ছায়ফুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষক জোবায়েরের দুদিন আগে আমি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। সে হিসেবে আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার কথা। কিন্তু এর মধ্যে তিনি আমার কাছে এসে জানান তার চাকরির মেয়াদ আর ছয়-সাত মাস আছে। এজন্য তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হতে চান। এরপর আমি তাকে একটি অনাপত্তিপত্রে স্বাক্ষর করে দেই। তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হলে আমার আপত্তি নেই। এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্যও নেই।’
দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জোবায়ের ইসলাম বাদল বলেন, ‘ছায়ফুল্লাহ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হতে চান না। আমার দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়ে অনাপত্তি দিয়েছেন। আপাতত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে আমি বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছি। আর্থিক বিষয় ছাড়া সব রকম দায়িত্ব পালন করছি। এর আগেও দীর্ঘদিন আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলাম। প্রধান শিক্ষক মারা যাওয়ার পর তাঁর মৃত্যু সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। আশা করি দুএক দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনুমোদনের বিষয়টি রংপুর বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক মহোদয় দেখেন। এ নিয়ে আমি কথা বলেছি। আশা করি আজকালের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
সফিকুল আলম/এসজে/এমএস