মোস্তফার ওয়ার্কসপেই সন্তানের স্নেহে বেড়ে উঠছে বক-পানকৌড়ি
ঝড়-বৃষ্টিতে বাসা ভেঙে নিচে পড়ে থাকা পাখির ছানাদের সন্তানের স্নেহে বড় করে বনে অবমুক্ত করেন বরগুনার তালতলী উপজেলার ওয়ার্কসপ মিস্ত্রি মোস্তফা। বর্তমানে দুটি বক ও একটি পানকৌড়ির বাচ্চা পালছেন তিনি। তার ওয়ার্কসপেই বেড়ে উঠছে পাখিগুলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়ার্কসপের নিয়মিত কাজ চলছে। পাশেই দুটি বক পানকৌড়ি ঘোরাফেরা করছে। মোস্তফা তার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি পাখিগুলোকে খাবার দিতেও ভুলছেন না তিনি।

পাখিপ্রেমী মোস্তফা জানান, ওয়ার্কসপ ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে মাঝে মধ্যেই তালতলীর নদী ও সমুদ্র উপকূলের জঙ্গলের মধ্যে ছোট খালগুলোতে মাছ ধরেন তিনি। জঙ্গলের গাছগুলোতে থাকা পাখির বাসাগুলো মাঝে মধ্যেই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় পাখির বাসা থেকে বাচ্চাগুলো নিচে পড়ে যায়। তখন মা পাখি বাচ্চাগুলোকে বাসায় তুলতে পারে না। এমন অনেক পাখির বাচ্চা তিনি গাছে উঠে তাদের বাসায় তুলে দেন। তবে যে পাখির বাসাগুলো একেবারে ভেঙে যায় বা বাচ্চা পড়ে থাকলেও বাসার সন্ধান পাওয়া যায় না, সেসব বাচ্চাকে কুড়িয়ে আনেন তিনি। নিজের ওয়ার্কসপ ঘরের পিছনে নির্মাণ করা বাসায় স্থান হয় তাদের। ঘরে থাকা খাবারের পাশাপাশি খালে ধরা মাছও তাদের দেওয়া হয়।

মোস্তফা আরও জানান, অতীতে বড় করা পাখিগুলো বনে অবমুক্ত করলেও বর্তমানে তার ঘরে বেড়ে উঠছে একটি পানকৌড়ি ও দুটি বকের বাচ্চা। পাখিগুলো সব সময় মুক্ত অবস্থায় থাকে। তার ঘর ও আশপাশের এলাকায় ঘুরেফিরেই কাটে দিন। তবে এলাকার কেউ যাতে পাখিদের ক্ষতি না করতে পারে, এর জন্য তাদের গায়ে লাল রঙ লাগিয়ে দিয়েছেন। যাতে পাখি দেখেই সবাই বুঝতে পারে এগুলো মোস্তফার ঘরে বেড়ে ওঠা।
তালতলী উপজেলার অনেকেই মোস্তফার এ পাখিপ্রেম দেখে মুগ্ধ। সালাম দফাদার নামের এক প্রতিবেশী বলে, ‘তালতলী বাজারে কোনো কাজে এলে মাঝে মধ্যেই চোখে পড়ে মোস্তফার পাখি প্রেম। মাঝে মধ্যেই দেখা যায় মোস্তফা বকের বাচ্চা বা পানকৌড়ির বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছেন। বাচ্চাগুলো যদি মোস্তফার চোখে না পড়তো হয়তো জঙ্গলেই মারা যেত।

বরগুনার পরিবেশ আন্দোলন কর্মী আরিফ রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বন আর বনের প্রাণীগুলো পরিবেশের একটি অংশ। আমরা যেভাবে পরিবেশ ধ্বংসের উৎসবে মেতে থাকি সেখানে এমন পাখিপ্রেম সত্যি প্রশংসার দাবিদার। পরিবেশের সব উৎসগুলোকে আমাদের সবার বাঁচিয়ে রাখা উচিত। কারণ পরিবেশ বাঁচলেই বাঁচবো আমরা।

তবে তালতলী বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি জানা নেই। বন্যপ্রাণী রক্ষায় আমাদের কিছু স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। মোস্তফা সে স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্য না হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এম এ আজীম/এসজে/এমএস