ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বনের ভেতর স্লুইসগেট নির্মাণের পরিকল্পনা, হুমকিতে শাল-গজারি বন

ইমরান হাসান রাব্বী | প্রকাশিত: ০৬:৪৭ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০২২

শেরপুর সীমান্তে ভারত থেকে নেমে আসা কালাঘোঁষা নদীতে স্লুইসগেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। জাইকার অর্থায়নে বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীতে স্লুইসগেট নির্মাণ হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়বে শাল গজারির এই বন, চিরতরে সৌন্দর্য হারাবে গারো পাহাড়। এরই মধ্যে এই প্রকল্প বন্ধ করতে এলজিইডিকে চিঠি দিয়েছে বনবিভাগ, আর জনজীবন রক্ষায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে সীমান্তের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাসিন্দারা।

বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালাঘোঁষা নদীর দুই পাড়েই রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনপদ। পুরো অংশ জুড়ে রয়েছে শাল-গজারির বনভূমি। রয়েছে বনবিভাগের সামাজিক বনায়ন ও সুফল বাগান প্রকল্প। বনবিভাগের বৃহৎ অংশের পাশাপাশি এখানে রয়েছে মালিকানাধীন রেকর্ড সম্পত্তিও। যেখানে বেশিরভাগই আবাদি জমি।

নদীতে গ্রামের এই অংশে কোনো ব্রিজ না থাকায় পায়ে হেঁটেই নদী পার হতে হয় হালচাটি গ্রামের কোচপাড়ার বাসিন্দাদের। পুরো এলাকাজুড়ে মাত্র একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও শিক্ষার্থীদের যেতে হয় হাঁটু পানি মাড়িয়ে। বর্ষায় পানি বেড়ে গেলে দুর্ভোগ বাড়ে স্থানীয়দের। এলজিইডির তথ্যমতে, এখানকার কাঁচা সড়কটি গেজেটভুক্ত না হওয়ায় ব্রিজ নির্মাণ সম্ভব নয়। তাই নদীতে পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করতে হয় এলাকাবাসীর।

বনের ভেতর স্লুইচগেট নির্মাণের পরিকল্পনা, হুমকিতে শাল-গজারি বন

সম্প্রতি এই নদীর ভাটি এলাকায় গান্ধিগাঁও অংশে জাইকার অর্থায়নে স্লুইচগেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে এলজিইডি। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে এখন অপেক্ষা প্রকল্প শুরুর। কিন্তু এই স্লুইচগেট নির্মাণ হলে উজানের হালচাটি অংশে সারাবছর পানি জমে থাকলে যাতায়াত বন্ধসহ দুর্ভোগে পড়বে স্থানীয়রা। গান্ধিগাঁও অংশের যে স্থানে স্লুইচগেট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার পাশের সব জমিই বন বিভাগের। দীর্ঘদিন ধরে আবাদের অজুহাতে জমি ছাড়ছে না দখলদাররা। তাদের উচ্ছেদে বনবিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম থাকলেও সেই জমিগুলোতে চাষের জন্য পানি সরবরাহের অজুহাতে এই স্লুইচগেট দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হবে বনবিভাগের।

এছাড়া স্লুইচগেট নির্মাণ হলে ক্ষতির মুখে পড়বে বনভূমি, মারা যাবে শাল-গজারি গাছ। আটকে রাখা গভীর জলে যাতায়াত বন্ধ হবে দুই পাড়ের নৃ-গোষ্ঠীর বাসিন্দাদের। ক্ষতিগ্রস্ত হবে উজানের আবাদি জমির। সম্প্রতি এই প্রকল্প বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে সীমান্তের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন।

স্থানীয় কৃষক রশিদ মিয়া বলেন, নদীর দুই পাড়েই বন। স্লুইচগেট বসালে পানি আটকে থাকলে বন এমনিই মারা যাবে। তখন আর বন টিকিয়ে রাখা যাবে না।

বনের ভেতর স্লুইচগেট নির্মাণের পরিকল্পনা, হুমকিতে শাল-গজারি বন

কোচপাড়ার হরিনাথ কোচ বলেন, আমাদের কোনো ব্রিজ নেই। এই পানি পার হয়ে আমাদের এলাকায় যেতে হয়। বন্যহাতি আসলে এই পাড়ের মানুষ আমাদের সাহায্য করে আবার এই পাড়ে হাতি নামলে আমরা তাদের সাহায্য করি। এখানে স্লুইচগেট হলে দুইপাড়ের মানুষই বিপদে পড়বে।

শিক্ষার্থী ঝুমুর বলে, আমাদের এই নদী পার হয়েই স্কুলে যেতে হয়। স্লুইচগেট হলে পানি বেশি থাকবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে না। আমাদেরও অনেক সমস্যা হবে।

পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক মেরাজ উদ্দিন বলেন, এই গারো পাহাড় শেরপুরের ঐতিহ্য। গুটিকয়েক কৃষকের আবাদের সুবিধার জন্য এই স্লুইচগেট নির্মাণ হলে পুরো বনটাই ধ্বংসের মুখে পড়বে। আমরা এই প্রকল্পের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সবুজ বন নষ্ট করে এখানে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে সবুজ আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত।

বনের ভেতর স্লুইচগেট নির্মাণের পরিকল্পনা, হুমকিতে শাল-গজারি বন

এদিকে, বন রক্ষায় স্লুইচগেট না করতে এরইমধ্যে এলজিইডিকে চিঠি দিয়েছে বনবিভাগ। আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে আবারও আবেদন করে পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে এলজিইডি। শেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। আমাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে, এই স্লুইচগেট হলে স্থানীয়দের আবাদের সুবিধা হবে। তবে কিছু অসুবিধার কথাও আমরা জানতে পেরেছি। বনবিভাগ থেকে আমাদের একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের আপত্তির বিষয়েও কাজ করছি। সবশেষ তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সব পর্যবেক্ষণ শেষ হলেই আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবো।

তবে বনভূমি ও জীববৈচিত্রের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কাজ শুরু করতে দেবে না বনবিভাগ। ময়মনসিংহ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আবু ইউসুফ বলেন, বনের ভেতর বয়ে যাওয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে স্লুইচগেট নির্মাণ হলে বনের ভয়াবহ ক্ষতি হবে। বনের ভেতর কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে অবশ্যই মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। সেই অনুমতি ছাড়া আমরা কোনোভাবেই কাজ শুরু করতে দেবো না। এখানে এই স্লুইচগেট নির্মাণ হলে বনের গাছের পাশাপাশি জীববৈচিত্রও ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে।

এমআরআর/জেআইএম