কলুর ঘানিতে সংসার চলছে না তাদের
আধুনিকতার স্রোতে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে অনেক প্রাচীন ঐতিহ্য। যা এখন শুধু বইয়ের পাতাতেই শোভা পাচ্ছে। তেমনি সমাজ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে কলু সম্প্রদায়। প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে এ পেশার গুরুত্ব কমে যাওয়ায় জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে কলু সম্প্রদায় পেশা বদল করেছেন। তাই গ্রামাঞ্চলের কোথাও আর চোখে পড়ে না কলুর ঘানিও।
এক সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় প্রতি গ্রামেই কলু সম্প্রদায়ের লোকজন বাস করত। তাদের পেশাই ছিল তিল, তিষি ও সরিষা থেকে তেল উৎপাদন করা। ওই তেল গ্রামে গ্রামে ফেরি করে তা বিক্রি করতো। এক সময় গ্রামের বনেদি গৃহস্থরা কলু বাড়িতে গিয়ে তিল, তিষি ও সরিষা দিয়ে আসত। আর কলুরা কাঠের তৈরি গাছে তা ঢেলে নিজেরাই ঘানি টেনে তেল উৎপাদন করত। এজন্য একদিকে কলুদের যেমন ব্যবসা হত অন্যদিকে গৃহস্থ মালিকও পেতেন খাঁটি তৈল।
এক পর্যায়ে স্বচ্ছল কলুরা ঘানি টানার কাজে ঘোড়া, গরু ও মহিষ ব্যবহার করা শুরু করে। কয়েক বছর আগেও নেত্রকোণা অঞ্চলে অস্বচ্ছল কলুদের ঘানি টানতে দেখা গেছে। কিন্তু কলু সম্প্রদায়ের লোকজন বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে লাভজনক অন্যান্য পেশায় চলে যাওয়ায় কলুর ঘানি এখন বিলুপ্ত প্রায়। তবুও জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে এখনও দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এ পেশাকে ধরে রেখেছেন কেউ কেউ। কদাচিৎ দেখা মেলে কলুর ঘানি টানার দৃশ্য। পরিশ্রম বেশি হওয়ায় এখন আর কোনো কলুই নিজে ঘানি টানেন না। এ কাজে পশুকে ব্যবহার করেন।
এখনো নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের জালালপুর ঋষিপাড়া গ্রামে ঘানি টানার দৃশ্য চোখে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ গ্রামের দুই সহোদর মানিক মিয়া ও ইঞ্জিল মিয়া বাবার পেশাকে ধরে রেখেছেন। মানিক মিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জাগোনিউজকে জানান, ৫০/৬০ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে তারা জড়িত। আগে তাদের বাবা একাজ করতো। বাবার মৃত্যুর পর থেকে তারা এ কাজ করে আসছে। তবে শুধু এ পেশার উপর নির্ভর করে তাদের এখন আর সংসার চলে না।
এদিকে ইঞ্জিল মিয়ার স্ত্রী রিক্তা আক্তার জাগো নিউজকে জানান, আমাদের দুই ঘরে ৪টি ঘানি টানার গাছ আছে। ঘানি টানার কাজে আমরা ঘোড়া ব্যবহার করি। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘানি টেনে ১ কেজি তেল বের করতে পারি। যার বর্মমান বাজার মূল্য ৩শ টাকা। এতে আমাদের সংসার চলে না।
কামাল হোসাইন/এমএএস/আরআইপি