ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নীলফামারীতে এক বধ্যভূমিতে বাঁশঝাড়, অপরটিতে ঘরবাড়ি

জেলা প্রতিনিধি | নীলফামারী | প্রকাশিত: ০৭:০৫ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২

নীলফামারির সদর উপজেলার দক্ষিণ শুটিপাড়া (বকশিপাড়া) এলাকায় সালেহর বাঁশঝাড়। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনারা এখানে ক্যাম্প করেছিল। হত্যা করে লাশ রেখে যেত। বিষয়টি সবাই জানলেও বাঁশঝাড়ের মালিক এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় সরকারের মাধ্যমেও তাকে কিছু জানানো হয়নি বলে দাবি তার।

একই অবস্থা কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি বসুনিয়াপাড়া (নেত্রার বাজার) এলাকার বধ্যভূমিটির। এতে রয়েছে স্থানীয় এক মোবাইল সার্ভিস ব্যবসায়ীর বাসস্থান।

স্থানীয়রা জানান সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় আশপাশের এলাকার মানুষজনকে এনে জড়ো করা হতো। পরে সারিবদ্ধ করে হত্যার পর লাশ রেখে যেত পাক সেনারা।

নীলফামারী জেলায় সরকারিভাবে বধ্যভূমির সংখ্যা ৯টি। এর মধ্যে কয়েকটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। কয়েকটির কাজ চলমান থাকলেও অবহেলা ও অরক্ষিত রয়েছে তিনটি। এর মধ্যে শুটিপাড়া, বাহাগিলি বসুনিয়াপাড়া রয়েছে।

জেলার ৯টি বধ্যভূমি ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার দক্ষিণ শুটিপাড়া (বকশিপাড়া) এলাকার নির্ধারিত বধ্যভূমির স্থানে রয়েছে বাশঁঝাড়। যা ব্যক্তি সালেহর বাঁশঝাড় নামে পরিচিত। স্থানীয়রা বাঁশঝাড়টিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনাদের ক্যাম্প ছিল বলে জানালেও বাঁশঝাড়ের মালিক এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় সরকারও তাকে কিছু জানায়নি।

এছাড়া ডোমার পশ্চিম বোরাগাড়ী বধ্যভূমিটি নিয়ে রয়েছে নানা মত। ডোমার ফরেস্টের এক কর্নারে বধ্যভূমিটির স্থান নির্ধারণ হলেও স্থানীয় অনেকেই বলছেন বর্তমানে তা ফসলি জমি বানানো হয়েছে। তবে রাত হলেই সেখানে জুয়াড়ি ও মাদকাসক্তদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়।

নীলফামারী সদর উপজেলার শুটিপাড়া এলাকার আজিজুল ইসলাম। শুটিপাড়া বধ্যভূমিতে তার বাবাকে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছিলো।

তিনি সেই স্মৃতিচারণ করে বলেন, স্টেশন পাড়ার বোচা বাবুসহ আরও কয়েকজনকে এনে এই বাঁশঝাড়ের এখানে মেরা ফেলা হয়েছে। আমার বাবাকে এনে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। যখন মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে এখানে গুলি করেছিল। তখন পাকবাহিনী টেক্সটাইল হয়ে সৈয়দপুর চলে যায়। ফলে আমার বাবা বেঁচে গেছিলো। কিন্তু এখন এটা লুৎফরের বাঁশঝাড়। সবাই সলেহর বাঁশঝাড় নামেই চেনে। এটা সংরক্ষণ করা হলে সবাই যায়গা টা চিনত, সম্মান করত।

তবে বাঁশঝাড়ের মালিক লুৎফর রহমান বলেন, এখানে কোনো ক্যাম্প বা মানুষ মারা হয়নি। আমার বাপ-দাদারা বলেননি। দাদার সময় থেকে এখানে বাঁশঝাড় এবং এটা আমার দাদা সলেহর বাঁশঝাড় নামেই পরিচিত। স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের কেউও বলেননি এটা বধ্যভূমি।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি শুটিপাড়া এলাকার আমিজুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে এলাকার মানুষ আনি মারি ফেলে রাখছিলো। ভয়ে কাহো আসত না। পরে মিলিটারি গেইলে যার যার লাশ নিয়া যেয়া মাটি দিত। এখন তো এখানে বাড়ি। মজনুর তো আর জমি যায়গা নাই, অন্য খানে বাড়ি বানাবে। যদি সরকার চায় কোনোভাবে এখানে স্মৃতিসৌধ বানাবে তাহলে আরকি মানুষ চিনত যায়গাটা।’

একই এলাকার এলিজা বেগম বলেন, ‘এখানে লাশগুলা রাখছিলো। মজনুর চাচাকেও তো এখানে মারছে। কিন্তু এখন কোনো চিহ্ন নাই এটা মুক্তিযুদ্ধের যায়গা৷ বাড়ি তো আর ভেঙে দেওয়া যাইবে না।‘

বধ্যভূমি চিহ্নিত স্থানে বসবাস করা মজনু মিয়া বলেন, এখানে আমার চাচাকে মারা হয়েছে। এলাকার অনেক মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। সরকার যদি চায় তাহলে আমি দিতে রাজি। কিন্তু আমার আর কোনো যায়গা জমি নাই বাড়ি বানানোর। আমাকে পুনর্বাসন করা হলে কোনো আপত্তি নেই। আমিও চাই এখানে একটা স্মৃতিস্তম্ভ হোক।’

ডোমার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক আল আমিন রহমান বলেন, পশ্চিম বোড়াগাড়ি বধ্যভূমিতে মানুষদের পুতে রাখা হয়েছিলো। শিয়াল কুকুর লাশ বের করে খাইত। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা পরে বিভিন্ন সময় হাড়, মাথার অংশ, নানা স্থানে গভীর করে পুঁতে রেখেছে। কিন্তু সে যায়গাটা এখন দেখে মনে হবে না যে এটা বধ্যভূমি। সন্ধ্যা হলে জুয়া অথবা মাদকের আড্ডাখানা হয়ে যায়। এটি সংরক্ষণ করা জরুরি।’

ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপী বলেন, অফিসে আসলে এ বিষয়ে জানাতে পারব।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বাহাগিলি বসুনিয়া পাড়ায় একটি বধ্যভূমি রয়েছে। এটি অধিগ্রহণে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অধিগ্রহণ হলে তো আর সমস্যা নেই। তখন বাস্তবায়ন করা হবে।

নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কোজ ঘোষ বলেন, বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ সরকারের আছে। যে দুটি বধ্যভূমির কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর বিষয়ে অবশ্যই খোঁজ নেওয়া হবে।

এএইচ/এএসএম