ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

প্রাণভয়ে পাড়া ছাড়লেন আরও ১৪৬ পাহাড়ি

জেলা প্রতিনিধি | বান্দরবান | প্রকাশিত: ০৮:৫৭ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

প্রাণের ভয়ে পাড়া ছাড়লো বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপি এলাকার ৫২ পরিবারের আরও ১৪৬ বাসিন্দা। তারা রুমার মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের হলরুম ও বম সোশ্যাল কাউন্সিল হলরুমে আশ্রয় নিয়েছেন।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) সকাল থেকে মুয়ালপি পাড়া ছেড়ে আসা পাহাড়িরা এসব স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন: প্রাণভয়ে পাড়া ছাড়লো দুর্গম পাহাড়ের ৪০ পরিবার 

পাড়া ছেড়ে আসা মংপ্রুচিং মারমা মোবাইলে জানান, পাড়ার পাশের এলাকায় কয়েক দিন ধরে গোলাগুলি চলে। ভয়ে পালিয়ে এসেছি। পাড়া থেকে নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ টানা চার ঘণ্টা পায়ে হেঁটে উপজেলা শহরে পৌঁছেছি। ঘরের জিনিসপত্র ও গবাদিপশু ফেলে আসতে হয়েছে। কয়েক পরিবারের সদস্যরা হাঁটতে না পেরে রাস্তায় জঙ্গলে রয়ে যায়।

হ্লাথোয়াইচিং মারমা নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, এক সপ্তাহের আগে কেএনএফ সদস্যরা আমাদের পাড়ার এক যুবককে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। এটা নিয়ে সবাই ভয়ে ছিলাম। এরপরে আপাতত কাউকে কোনো বিরক্ত করেনি। তার মধ্যে শনিবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ভবিষ্যতে খারাপ কিছু হওয়ার ভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে এসেছি।

তিনি আরও জানান, আমাদের মুয়ালপি পাড়ায় বম সম্প্রদায়ের আরও ৭০টি পরিবার ছিল। তারাও গতকাল চলে গেছে। তবে তারা কোথায় চলে গেছে আমরা জানি না।

jagonews24

রুমা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুইপ্রুচিং মারমা বলেন, ওই এলাকা বিরূপ পরিস্থিতির কারণে ভয়ে ৪০ পরিবার পালিয়ে এসেছে। রোববার সকালে আরও ১২ পরিবার পালিয়ে এসেছে। পালিয়ে আসা লোকজনের পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই ছিল না। অনেক শিশু শীতে কাঁপছিল। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে পরামর্শ করে মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের হলরুমে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবার জন্য খাবার ও কম্বল বিছানা-চাদরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলির পর আগুন 

পাইন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, হ্যাপীহিল পাড়া, বাসত্লাং পাড়া, মুননুয়াম পাড়া, মুয়ালপি পাড়া, সানাক্র পাড়া, ক্যকতাইংপাড়া ও ছান্দলা পাড়া আমার ইউনিয়নে পড়েছে। এ পাড়াগুলোতে নাকি কেএনএফের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন। তারা প্রায়ই অভিযোগ করতেন কেএনএফ সদস্যরা পাড়ায় এসে উৎপাত করত। পাড়াবাসীদের নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করতো। গত ২৭ জানুয়ারি সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। অভিযানের এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের গুলিবিনিময় হয়। গত দু-তিনদিন ধরে টানা গোলাগুলির কারণে আত্মরক্ষার্থে পাড়াবাসী ঘরবাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে নিরাপদ মনে না করায় মুয়ালপি মারমা পাড়ার ৪৫টি পরিবারের সবাই রুমা বাজারে পালিয়ে এসেছে।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাদের পরামর্শে পালিয়ে আসা পরিবারকে আশ্রয়, খাবার ও বিছানা দেওয়া হয়েছে। একটি পাড়ার মানুষ পালিয়ে আসতে পেরেছে। আজ হয়তো ওই এলাকার আরও ছয় পাড়ার পরিবার চলে আসতে পারে।

রুমা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, পাইন্দু ইউপির মুয়ালপি পাড়া এলাকায় সেনাবাহিনী-কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের মধ্যে গোলাগুলির কারণে ভয়ে এ পর্যন্ত মারমা সম্প্রদায়ের ১৪৬ জন ও বম সম্প্রদায়ের ৪৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন।

এ বিষয়ে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন শিবলী বলেন, দুদিন ধরে রুমার বিভিন্ন পাহাড়ে কেএনএফের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। অভিযানে কেএনএফ সদস্যরা হ্যাপীহিল, বাসত্লাং পাড়া, মুননুয়াম পাড়া, মুয়ালপি পাড়া, সানাক্র পাড়া, ক্যকতাইং পাড়ায় এসে আশ্রয় নেয়।

তিনি আরও জানান, মারমা সম্প্রদায়ের ৫২ পরিবারে ১৪৬ জন রুমার মারমা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের হলরুমে রাখা হয়েছে। বম সম্প্রদায়ের বাকি ৪০ নারী-শিশু রুমা বাজারের বম সোশ্যাল কাউন্সিল হলরুমে রয়েছেন।

নয়ন চক্রবর্তী/আরএইচ/জিকেএস