ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জামালপুরে তামাক চাষ কমলেও ছাড়তে পারেননি অনেকে

জেলা প্রতিনিধি | জামালপুর | প্রকাশিত: ১১:৩৮ এএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় তুলনামূলক তামাক চাষ কমেছে। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অনেকে এখনো এ চাষ ছাড়তে পারেননি। কৃষকরা বলছেন, চাষাবাদে খরচ কম আবার লাভ বেশি। কিন্তু অন্য ফসলে খরচ বেশি হলেও লাভের সম্ভাবনা কম। তাই পূর্বপুরুষদের পথেই হাঁটছেন তারা।

কৃষি অফিস জানায়, জেলা সদর ও মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের শেখ সাদী, টুপকার চর, রৌমারী বিলের ৩০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। যা গতবার ছিল ৪০ হেক্টর। দীর্ঘদিন ধরেই বংশপরম্পরায় এ ক্ষতিকর ফসল চাষ করছেন কৃষকরা। তবে এ অঞ্চলে ধান চাষের জন্য বেশ উপযোগী। যারা ধান চাষ করেছেন তারা ভালো ফলনও পাচ্ছেন। কুফল বোঝালেও লাভ বেশি হওয়ায় বন্ধ হচ্ছে তামাক চাষ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তামাকক্ষেত। পাশেই আছে ধানক্ষেত। কেউ তামাকগাছের পরিচর্যা করছেন, কেউ পাতা কাটছেন। আবার কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তামাকপাতা রোদে শুকাচ্ছেন।

কথা হয় ফজল মেম্বার নামে এক স্থানীয় কৃষকের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বছর চার বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছি। বছরে একবারই আবাদ হয়। অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) মাসে চারা রোপন করলে ফাল্গুন-চৈত্র (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) মাসে ফসল ঘরে ওঠানো যায়। বিঘা প্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করে ৮-১০ মণ পাতা পাওয়া যায়। বর্তমানে বাজার খুব ভালো ভালো, এক মণ পাতা ৮-১০ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। ব্যাপারীরা বাড়ি থেকেই এ পাতা সংগ্রহ করেন। মৌসুম শেষে তারা অন্য ফসল আবাদ করবো।

মতি মন্ডল (৫০) নামের এক কৃষক জানান, মানুষ পানের সঙ্গে তামাকপাতা খান। তাই তারা চাষ করেন। একবিঘা জমিতে ৮-১০ মণ তামাক পাতা হয়। ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকেই পাতা কিনে নিয়ে যান। এক মণ পাতা ১০-১২ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারেন। বৃষ্টি না হলে ভালো লাভ পান। ধান চাষও করা হয়।

ক্ষেত পরিচর্যা করছিলেন খায়রুল ইসলাম। প্রতি বছর পানি চলে যাওয়ার পর এখানে তামাক চাষ করেন তিনি।

খায়রুল বলেন, তামাক চাষে পরিশ্রম আছে। দামও ভালো পাওয়া যায়। বংশ পরম্পরায় প্রতিবছরই এ পাতা চাষ করি। এরপর ধান রোপণ করবো।

jama-(2).jpg

রনি খাতুন নামে এক নারী বলেন, ক্ষেত থেকে পাতা সংগ্রহের পর ১৫-২০ দিন রোদে শুকাতে হয়। তারপর পানিতে ভিজিয়ে আঁটি বেঁধে বিক্রির উপযোগী করা হয়। একশত আঁটি ২০-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি।

তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, তামাক পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর উচ্ছিষ্ট বাতাসের সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশ করে ক্যানসার, হৃদরোগসহ নানা ধরনের মরণব্যাধি হতে পারে। যারা তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত একসময় তারা হৃদরোগ-ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হবেন। এসব রোগ থেকে তাদের বাঁচানো সম্ভব হবে না।

তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিউটন হাওলাদার বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, তামাক যখন সবুজ থাকে তখন এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। অন্য উদ্ভিদের মতো তামাক বাতাসে অক্সিজেন ছাড়ে এবং নাইট্রোজেন গ্রহণ করে। যখনই এটাকে রোদে শুকানো কিংবা অন্যকোনোভাবে শুকানো হয় তখনই এটা শরীরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি মনে করেন তামাক বছরে দুই-তিনবার চাষ করা গেলে অর্থনৈতিকভাবে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।

জামালপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, যারা তামাক চাষ করছেন তাদের এ বছর প্রণোদনার আওতায় ধানের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তাই গতবারের তুলনায় এ বছর ১০ হেক্টর কমে ৩০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। নিয়মিত কৃষকদের এর কুফল সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে সামনে এ সংখ্যা আরও কমে যাবে। তবে এটি লাভজনক বলে অনেক কৃষকই ছাড়তে পারছেন না।

মো. নাসিম উদ্দিন/এসজে/এমএস