ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আগুনে পুড়ছে সংরক্ষিত বন, অনাকাঙ্ক্ষিত বললেন কর্মকর্তা

জেলা প্রতিনিধি | মৌলভীবাজার | প্রকাশিত: ০৬:৫৬ পিএম, ১২ মার্চ ২০২৩

মৌলভীবাজারের জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টে কয়েকদিন ধরে আগুন জ্বলছে। এরই মধ্যে ধলছড়ি ও মাকাল জোরায় প্রায় ৪০ হেক্টর বন আগুনে পুড়েছে। আগুন নেভাতে বন বিভাগের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তবে বন বিভাগ বলছে, মাত্র চার-পাঁচ হেক্টর বন পুড়েছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা জানান, ওই এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কয়েক হাজার গাছ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পরিবেশগতভাবে মিশ্র চিরসবুজ সমনভাগ বনাঞ্চলের এ অংশটি ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্র্য হটস্পটের একটি অংশ এবং এটি ভারত-বাংলাদেশের আন্ত-সীমান্ত ব্যাপী ছয়টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যকার একটি।

তারা আরও জানান, সমনভাগ বনাঞ্চলে প্রায় ৬০৩ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং উভচর সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণির সমন্বয়ে মোট ২০৯ প্রজাতির মেরুদণ্ডী বন্যপ্রাণী আছে। এর মধ্যে ২০ প্রজাতির উভচর, ৪৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ১১৩ প্রজাতির পাখি ও ৩১ প্রজাতির স্তন্যপায়ীসহ অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র।

প্রত্যক্ষদর্শী পরিবেশকর্মী খুরশেদ আলম বলেন, ‘মিশ্র চিরসবুজ সমনভাগ বিটের ধলছড়ি ও মাকাল জোরা এলাকায় প্রায় ৪০ হেক্টর বনভূমি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এক পাশে এখনো জ্বলছে আগুন। আগুনে পুড়ে অজগর সাপ, চশমাপরা হনুমান, মায়া হরিণ, কচ্ছপ, বনরুই, সজারুসহ বিভিন্ন সরীসৃপ প্রজাতির বিরল কীটপতঙ্গ এবং বেশ কিছু প্রজাতির বৃক্ষের ক্ষতি হয়েছে। এদিকে বনের একপাশে অবাধে চলছে বাঁশ কাটার মহোৎসব। প্রায় ৪০ শ্রমিক দিয়ে সরকারি সম্পত্তিগুলো বিনষ্ট করা হচ্ছে। এসব বাঁশ পরবর্তীতে আগুন দিয়ে পোড়ানো হবে।’

jagonews24

স্থানীয় বাসিন্দা কামাল আহমদ বলেন, ‘চার-পাঁচ দিন আগে বনে আগুন দেখতে পাই। আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় বনের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি বন বিভাগকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে এখানকার বিভিন্ন বিরল প্রজাতির প্রাণীসহ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ বিটের প্রায় অর্ধেক জায়গা এখন খাসিয়াদের দখলে। তারা প্রায় ৯০০ হেক্টর বনভূমি দখল করে গড়ে তুলেছে পানের জুম। দিন দিন বাঁশ ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে ধ্বংস করেছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থাল। এখন বন্যপ্রাণীগুলো এই এলাকা থেকে চলে যাচ্ছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমি জ্বালানি কাঠ ও নিজের কাজের জন্য বাঁশ নিতে মাঝে মধ্যে বনে আসা যাওয়া করি। বনটি এমন ছিল না। এটি প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো। তবে এখন আর আগের মতো নেই। বনে হাতিও থাকে না। কারণ, থাকার কোনো পরিবেশ নেই। আগে অনেক ধরনের বন্যপ্রাণী ও মায়াহরিণ দেখা যেত।’

পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের একজন সদস্য সুনিত বলেন, ‘একটি বন কেউ তৈরি করতে পারবে না। কিন্তু ধ্বংস করা যায় খুব সহজে। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালা লতাপাতা হচ্ছে বন্যপ্রাণীর আবাস্থল। এগুলো যখন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে, তখন প্রাণীগুলো কোথায় যাবে? বন বিভাগের উচিত এরকম গভীর বনকে প্রাকৃতিকভাবে রাখা। বন্যপ্রাণী এখন হুমকির মুখে। অচিরেই।’

এ বিষয়ে সমনভাগ বিট কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপকারভোগীদের মাধ্যমে ২০ হেক্টর জায়গায় একটি আগর বাগান করা কথা আছে। এ জন্য বন কেটে পরিষ্কার করা হচ্ছে। আগুনের বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। অসাবধানতায় হয়তো কেউ ধূমপানের পর সিগারেটের আগুন ফেলেছে। আর এটা থেকেই আগুন লেগে বনের চার-পাঁচ হেক্টর ভূমি আগুনে পুড়িয়ে গেছে।’

তবে বড়লেখা রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তৌফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি খবর পেয়েছি। যেকোনো অসাবধানতায় হয়তো এ আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ঝোপঝাড়, গাছের ডালপালা কাটা হয়েছে। এজন্য আগুন লেগে ওই এলাকা পুড়ে গেছে। আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছি।’
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রেজাউল করিম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমি বনে আগুন লাগার বিষয়টি জেনেছি। যেহেতু সংরক্ষিত বন এলাকায় আগুন লেগেছে এতে সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণীসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ এবং পাখির বাসার ব্যাপক ক্ষতি হবে।

আব্দুল আজিজ/এসজে/জিকেএস