ট্রান্সজেন্ডার হৃতিকার এগিয়ে চলা
ঘাত-প্রতিঘাত সামলে জীবনযুদ্ধে হার না মেনে এগিয়ে চলা একজন মানুষের নাম হৃতিকা। অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে তিনি এখন অনার্সের শিক্ষার্থী। হতে চান একজন সফল শিক্ষক।
শরীয়তপুরের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হৃতিকা। কলেজে সবাই তাকে হৃতিকা নামে জানলেও এটি তার পরিবর্তিত নাম। তিনি একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী।
ছোটবেলা থেকেই হৃতিকার মেয়েদের মতো চলাফেরা ও সাজগোজ করতে ভালো লাগতো। বয়ঃসন্ধির সময় তিনি বুঝতে পারেন তার মধ্যে পুরুষ নয়, আছে নারীসত্তা। তিনি নিজেকে নারী ভাবতে শুরু করেন।
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে হৃতিকা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই নিজের মধ্যে অন্যরকম পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। আমার চার ভাই আছে। আমি তাদের মতো না। আমার একজন বোন আছে। খেয়াল করলাম আমি তার মতোও না। তাহলে আমি কার মতো? যখন বড় হতে থাকি তখন একপর্যায়ে নিজেকে মেয়েদের মতো অনুভব করি।’
এ নিয়ে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে তাকে শুনতে হয়েছে বঞ্চনা। করা হয়েছে কটাক্ষ। একপর্যায়ে পড়াশোনাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। থাকতে পারেননি নিজের ভাইবোনের বিয়েতেও। পরিবার থেকে আড়াল করে রাখা হতো তাকে।

অবজ্ঞা সইতে না পেরে চলে আসেন শরীয়তপুর শহরের গুরুমা মিলন হিজড়ার ডেরায়। নিজেকে পুরোপুরিভাবে পরিবর্তন করতে কলকাতায় গিয়ে ট্রিটমেন্ট করিয়ে হয়ে যান ট্রান্সজেন্ডার নারী।
হৃতিকা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার জন্য সমাজের মানুষের কাছে আমার ভাই, বোনসহ পরিবারের সবাইকে কথা শুনতে হতো। তারপর বাধ্য হয়েই গুরুমার ডেরায় চলে আসি।’
এত কিছুর পরও হাল ছাড়েননি হৃতিকা। চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। এখন অনার্সে পড়ছেন। হতে চান একজন আদর্শ শিক্ষক। বিভাগের শিক্ষার্থীরাও তাকে আপন করে নিয়েছেন।
হৃতিকার সহপাঠী মেহেজাবিন বলেন, ‘হৃতিকা খুবই মেধাবী ও ভালো মনের মানুষ। ওর সঙ্গে চলতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। হৃতিকাও আমাদের বন্ধু। আমরা বন্ধুরা সব সময় ওকে সাহায্য করছি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অরেছুল আজম বলেন, পড়াশোনার প্রতি হৃতিকার প্রচণ্ড আগ্রহ আছে। আমরা বিভাগের শিক্ষকরা তার পড়াশোনার বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
এসআর/এএসএম